Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে পুলিশ নিয়োগ হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়॥যোগ্যতা সম্পন্নরাই চাকুরী পাবে – পুলিশ সুপার সালমা বেগম

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ‘নেশা ছেড়ে কলম ধরি, মাদকমুক্ত জেলা গড়ি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী শহরের ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের আয়োজনে গতকাল ২০শে মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় ইভটিজিং, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মতবিনিময় সভা কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা।
কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মোঃ আবুল বাসার মিয়া, কলেজের উপাধ্যক্ষ খন্দকার ফারুক আহম্মেদ ও কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মানোয়ার প্রমুখ। এ সময় কলেজের শিক্ষক মন্ডলী ও শিক্ষার্থীগণসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার সালমা বেগম তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোন এবং সকল মুক্তিযোদ্ধাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, আজকের এই সভায় প্রতিভাময় অসংখ্য তরুণের মাঝে আসতে পেরে আমি নিজেকে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত মনে করছি। এই তরুণরাই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কান্ডারী হয়ে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের নিজেদের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। আমরা আমাদের এই ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণরা আমাদের নিজেদের অতীত ইতিহাস ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সকলেরই জানা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন বলেই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন। তাদের এই আত্মত্যাগের কারণে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে এই দেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছি। আমার বিশ্বাস তোমরা তরুণরা নিজেদেরকে জাতির জনকের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মাধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সকলে একসাথে কাজ করবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের বাল্য বিবাহ, মাদক, ইভটিজিং ও জঙ্গীবাদসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বাল্য বিবাহ হওয়ার প্রধান কারণ অভিভাবকদের বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। আমরা যদি সকলে মিলে এই বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সকলকে সচেতন করি ও নিজেরা সচেতন হই তবে এই বাল্য বিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব। জেলা পুলিশ বাল্য বিবাহ বন্ধে বিভিন্ন রকম ক্যাম্পেইনসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। যে কেউ বাল্যবিবাহ সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিলে পুলিশ অবশ্যই সেই বাল্যবিবাহ বন্ধের ব্যবস্থা করবে।
তিনি তার বক্তব্যে জঙ্গীবাদ সম্পর্কে বলেন, যার মধ্যে দেশাত্মবোধ আছে সে কখনো জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত হবেনা। এরপরও যদি কেউ জঙ্গী হয় তবে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ‘আমার জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পরিনি, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি’। সুতরাং দেশে যাতে আর জঙ্গী সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমাদের সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে বাড়ীওয়ালাকে বাড়ী ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার ভোটার আইডি কার্ডে প্রদত্ত তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জেনে বাড়ী ভাড়া দেওয়া, বাড়ীতে কোন সন্দেহজনক লোকের আনাগোনা বা অন্য কোন বিষয় পরিলক্ষিত হলে পুলিশকে তাৎক্ষনিক জানানো। এছাড়াও আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর চলাফেরা অস্বাভাবিক বা জঙ্গীবাদ সম্পর্কিত মনে হলে পুলিশকে জানানো। সুতরাং আমার সকলে মিলে যদি এই সম্পর্কে সচেতন হই তবে দেশ থেকে আমরা ভবিষ্যতে অবশ্যই জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে পারব।
‘পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পন্ন স্মার্ট ব্যক্তির চেয়ে অযোগ্য, আনস্মার্ট ব্যক্তি যাদের টাকা আছে তাদের চাকুরী হয় এবং চাকুরী নিতে মোটা অংকের টাকা লাগে’ শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, আমি আমার চাকুরী জীবনে কোন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন টাকা নিতে দেখিনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দালালরা চাকুরী প্রদানের কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে। যদি কেউ এই সকল দালালকে চাকুরীতে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য টাকা দেয় তবে সেই দায়-দায়িত্ব পুলিশের নয়, যে চাকুরীর জন্য দালালকে টাকা দিয়েছে তার। আমি আমার ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে রাজবাড়ীবাসীকে এতটুকু বলতে পারি আগামী কিছুদিনের মধ্যে জেলা পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে শুধু নিয়োগের সরকারী ফরম কিনতে যে একশত টাকা লাগে সেটা আর তার ছবি ও কাগজ-পত্রের ফটোকপি করতে যে টাকা লাগবে সেটাই আবেদনকারীকে খরচ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই আমার থাকাকালীন সময়ে কোন নিয়োগে কাউকে কোন টাকা প্রদান করে চাকুরী নিতে হবে না। তবে কেউ যদি দালালের খপ্পড়ে পরে চাকুরী পাওয়ার আশায় টাকা দেন তবে সেই দায়িত্ব কখনোই জেলা পুলিশ নিবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশ সুপার সালমা বেগম আরো বলেন, মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী যেই হোক না কেন কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। জেলায় বর্তমানে প্রধান স্পটগুলোতে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা অনেক কমে এসেছে। তিনি শিক্ষাথীদের ইভটিজিং ও সন্ত্রাস থেকে দূরে রেখে নিজেদেরকে ভবিষ্যতের দেশ গড়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার আহবান জনান।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পক্ষ থেকে কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জরুল আলম দুলাল প্রধান অতিথিকে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।