॥মাহবুব হোসেন পিয়াল॥ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া ও বিলধোপাডাঙ্গা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র’ এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা দলের সদস্যরা।
গত ১২ই জুলাই দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেই একাডেমিক কিউরেটর সুকল্যাণ বাছারের নেতৃত্বাধীন ৫সদস্যের সমীক্ষা দলটি প্রায় ২ঘন্টাব্যাপী প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র’ এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
এ সময় ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম হাবিবুর রহমান আল হাবিব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকতাদিরুল আহমেদ এবং নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম তারেকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘একটি স্বপ্ন’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে মানমন্দির নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানা যায়। প্রবন্ধে জাফর ইকবাল জানিয়েছেন, পৃথিবীতে ৩টি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত রেখা আছে। সেগুলো হলো ঃ কর্কট ক্রান্তি, মকর ক্রান্তি ও বিষুব রেখা। ঠিক এ রকম ৪টি উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত রেখা আছে। সেগুলো হলো-শূন্য ডিগ্রী, ৯০ ডিগ্রী, ১৮০ ডিগ্রী ও ২৭০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা। রেখাগুলো সব মিলিয়ে ১২ জায়গায় ছেদ করেছে। এই ১২টি ছেদবিন্দুর ১০টির পড়েছে সাগর মহাসাগরে, ২টি পড়েছে স্থলভাগে। এর একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে, যেখানে মানুষ যেতে পারে না। আর অন্য বিন্দুটি পড়েছে বাংলাদেশেঅ আরো নির্দিষ্ট করে বললে কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদবিন্দুটি পড়েছে ভাঙ্গা উপজেলায়। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর নামে মানমন্দির নির্মাণের প্রস্তাব উঠেছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাফর ইকবাল।
প্রবন্ধে অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও জানিয়েছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কারিগরি কমিটি তৈরী করে এরই মধ্যে একটি সভাও হয়ে গেছে। গুগল ম্যাপে খুব সহজেই ছেদবিন্দুটি দেখা যায়। গুগল ম্যাপে গিয়ে ২৩.৫ঘ ৯০ঊ লিখলে সেটি কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা কোথায় ছেদ করেছে সেটা দেখিয়ে দেয়। মানমন্দির তৈরী করার জন্য ভাঙ্গাকে আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ। বঙ্গবন্ধুর নামে মানমন্দির নির্মিত হলে তা হয়ে উঠবে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে শুধু দেশের পর্যটকরাই নয়, সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসবে ভৌগোলিক এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দেখতে।
জাফর ইকবাল তার লেখায় বলেছেন, আমি নিশ্চিত জমি চাষ করার সময় অনেক মানুষ এই বিন্দুটির উপর দিয়ে হেঁটে গেছে কিন্তু এই জায়গাটির অচিন্ত্যনীয় ভৌগোলিক গুরুত্ব অনুভব করে সম্ভবত আর কেউ এখানে পা দেয়নি। প্রতি বছর জুন মাসের ২১ তারিখ দুপুর ১২টার সময় কেউ যদি বাইরে দাঁড়ায় এবং আকাশে মেঘ না থাকে তাহলে আবিষ্কার করবে সূর্য ঠিক মাথার উপর এবং সে জন্য সেখানে তার কোন ছায়া পড়ছে না। কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার সেই ছেদবিন্দুতে সেটি একেবারে পুরোপুরি আক্ষরিকভাবে সত্যি।