॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে সে দেশে ৫দিনের দ্বিপক্ষীয় সরকারী সফরে গতকাল সোমবার ডালিয়ানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট(বিজি-১৭২০) গতকাল ১লা বিকেল ৫টা ২০মিনিটে ডালিয়ানের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
ফ্লাইটটি আজ ২রা জুলাই দুপুর সোয়া ১২টায় (স্থানীয় সময়) লিয়াওনিং প্রদেশের ডালিয়ানে ডালিয়ান ঝাউশুইজি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছার কথা।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ডালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের(ডাব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় অংশ নেবেন এবং বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
ডাব্লিউএফই সামার দেভোস হিসেবে পরিচিত তিন দিনব্যাপী ‘ডাব্লিউএফই এনুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়ন্স ২০১৯’ আজ চীনের ডালিয়ান নগরীতে শুরু হচ্ছে।
বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে শাংরি-লী-হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। ডালিয়ান সফরকালে তিনি এখানেই অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২রা জুলাই সকালে ডালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডাব্লিউইএফ সামার দেভোর্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ক্লাউস স্কোয়াবের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিকেলে তিনি ডালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৩রা জুলাই সকাল ১১টায় চীন সরকারের দেয়া একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটযোগে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ডালিয়ান ত্যাগ করবেন।
ফ্লাইটটির ওই দিনই বেলা সোয়া ১২টায় বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর পর একটি মোটরশোভা যাত্রায় তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ডাইয়াউতাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বেইজিংয়ে বিকেলে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে নৈশ ভোজ সভায় যোগ দিবেন।
শেখ হাসিনা আগামী ৪ঠা জুলাই সকালে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপল এ বীরদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপল এ এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল এ চীনা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক নৈশ ভোজে যোগ দিবেন। তিনি একই দিনে বিকেলে সিসিপিআইটি’তে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বাণিজ্য রাউন্ড টেবিল বৈঠকে যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ই জুলাই সকালে ‘প্যানগোয়াল ইনিস্টিটিউশন’ নামে একটি চীনা থিঙ্ক ট্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
চীনা কোম্পানীগুলোর সিইওগণ তাঁর হোটেল স্যুটে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তিনি এনপিসি লী ঝাংশু’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ডাইয়াউতাইয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট ঝি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের দেয়া এক ভোজ সভায় যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী চীনে তার সফর শেষে আগামী ৬ই জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চীনের রাজধানী বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করবেন এবং একই দিনে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩৫মিনিটে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন গত শুক্রবার বলেন, ২রা থেকে ৬ই জুলাই পযর্ন্ত চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫দিনের সরকারী সফরকালে আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। এ সময়ে বেইজিং-এর সঙ্গে ঢাকা আটটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
তিনি গত শুক্রবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরকালে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এর পর বেইজিং রোহিঙ্গা সংকটটি নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।