Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দিনাজপুরে বাংলাদেশের প্রথম লোহার খনি আবিষ্কার

॥মাতৃকণ্ঠ ডেস্ক॥ দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় বাংলাদেশ ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কার করেছে। দুই মাস ধরে কূপ খননের মাধ্যমে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জিএসবি’র কর্মকর্তারা গতকাল ১৮ই জুন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিএসবি’র উপ-পরিচালক (ডিডি) মোহাম্মদ মাসুম জানান, ‘দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় ইসবপুর গ্রামে জিএসবির অনুসন্ধানে কূপ খনন করে ভূগর্ভের এক হাজার ৩৩০ ফুট নীচে প্রায় ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের একটি স্তর পাওয়া গেছে, যা দেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং বাংলাদেশে এধরনের প্রথম আবিষ্কার।’
খননকাজে নিয়োজিত জিএসবি’র উপ-পরিচালক আরও জানান, ‘বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার হয়েছে, সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নীচে। আর বাংলাদেশের লোহার পারসেন্ট ৬০ শতাংশের উপরে। জিএসবি’র নিজস্ব ল্যাব ও জয়পুরহাট বিসিএসআইআর পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। লোহার খনি আবিষ্কার বাংলাদেশে (ইসবপুরে) এই প্রথম, যার ব্যপ্তি ৬-১০ স্কয়ার কিলোমিটারের মধ্যে হতে পারে। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রুমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে।’
তিনি জানান, এর আগে ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর গত ২০১৩ সালে এই গ্রামের ২ কিলোমিটার পূর্বে মুশিদপুর এলাকায় কুপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্র ধরে চলতি বছরের গত ১৯ এপ্রিল থেকে হাকিমপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। এরপর ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে সেখানে আশার আলো দেখা যায়। এই খবর পেয়ে গত ২৬ মে জিএসবি’র মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান চৌধুরী সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শন করেন। এসময় মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সুখবর না দিলেও লোহার খনি আবিষ্কার হতে চলেছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার ফলে এক হাজার ৭৫০ ফুট গভীরে খনন করে লোহার খনির আবিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের এই স্তরটি পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক ইছাহাক আলীর কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৪ মাসের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করে জিএসবি।
জিএসবি’র উপ-পরিচালক (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার) মো. মাসুদ রানা জানান, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। ৩০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ৩ শিফটে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের গোলাম মওলা ও ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ‘আমরা জানতে পারলাম এখানে লোহার খনি পাওয়া গেছে। এখান থেকে লোহা উত্তোলন করা হলে এখানকার মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে এখানকার মানুষের। দেশের জন্যও লাভজনক হবে। এমনই আশায় বুক বাঁধছেন এখানকার সর্বস্তরের মানুষ। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের কাছে খনি উন্নয়ন কাজে জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ জানান, তার উপজেলায় লোহার খনি আবিস্কার হওয়ায় তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। এই খনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের কাজে লাগিয়ে চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।