Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

খাবার ও বাচ্চার অতিরিক্ত মূল্যে রাজবাড়ীর পোল্ট্রি শিল্প হুমকীতে

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ বছর দশেক আগেও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২য় পোল্ট্রি শিল্প হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিল রাজবাড়ী জেলার পোল্ট্রি খামারীরা। কিন্তু ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বার্ড ফ্লু’তে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক খামারীই আজ বেকার।
এক সময়ে জেলায় হাজারের বেশী লেয়ার খামার থাকলেও আজ তা নেমে এসেছে শতকের কোটায়। পোল্ট্রি খাবার, ওষুধ ও ১ দিনের বাচ্চার দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারীরা। জেলার পোল্ট্রি শিল্প আজ হুমকীতে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে লোকসানের হিসেব মেলাতে না পেরে ধূলায় মিশেছে অনেক খামারীর স্বপ্ন।
রাজবাড়ী সদরের আঁখি পোল্ট্রি ফার্মের মালিক মোঃ আলামিন ব্যাপারী জানান, বর্তমানে জেলার পোল্ট্রি খামারীরা সরকারীভাবে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে না। প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে কোন ধরনের চিকিৎসা বা পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক খামারী। পাশাপাশি মুরগীর ১দিনের বাচ্চা ও খাবারের দাম অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উপরে আবার হঠাৎ করে কমে গেছে ডিমের দাম। এ রকম অবস্থায় বর্তমানে খামারীরা লোকসানে রয়েছে। রাজবাড়ীতে যে পরিস্থিতি হয়েছে কিছুদিন পরে আর হয়তো পোল্ট্রি শিল্পই থাকবে না। খামারীরা হয়তো আর এই শিল্পটাকে ধরে রাখতে পারবে না। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে ৭শ এর বেশী খামার ছিলো। এখন তা নেমে কয়েকশ হয়েছে। সরকারীভাবে ক্ষুদ্র ঋণ পেলে খামারীরা হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে।
জেলা পোল্ট্রি শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন আহম্মেদ ডিউক জানান, আজ পোল্ট্রি শিল্পের যে অবস্থা-তা অত্যন্ত করুণ। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আমিষের ঘাটতি পূরণে পোল্ট্রি শিল্প সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পোল্ট্রির বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। রাজবাড়ীতে অনেক খামার আজ বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ সরকার পোল্ট্রি শিল্পের উপরে কোন রকম ভর্তুকি দিচ্ছে না। সবসময় খামারীরা আতঙ্কে রয়েছে, আবার যেকোন মূহুর্তে বার্ড ফ্লু’তে খামার বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের প্রতি আবেদন জানাই, পোল্ট্রি খামারের প্রতি সুনজর দিলে এই শিল্প টিকে থাকবে। বেকারত্ব দূর হবে।
খামারের শ্রমিক মোক্তার হোসেন জানান, আমরা শ্রমিকেরা পোল্ট্রি খামারে কাজ করে সংসার চালাই। পোল্টি শিল্পে দিন দিন লোকসান হওয়ার কারণে বেতন-ভাতা ঠিকমতো পাচ্ছি না। যদি মালিকেরা ভালো লাভবান হয় তাহলে শ্রমিকেরা বাঁচবে। তাই সরকারের প্রতি আকুল আবেদন, পোল্ট্রি খামারীদেরকে বাঁচান। দরিদ্র শ্রমিকেরা দু’বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাক।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গণেশ চন্দ্র মন্ডল জানান, বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় ২১১টি লেয়ার খামার, ৮৬২টি বয়লার ও ১২টি প্যারেন্টস স্টক খামার রয়েছে। দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে থাকা রাজবাড়ী জেলার পোল্ট্রি শিল্পের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে স্বল্প সুদে খামারীদের ঋণ প্রদান ও পোল্ট্রি ফিডে সরকারী ভর্তুকি দরকার। সরকারী বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ঋণসহ অনান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে পোল্ট্রি শিল্পে লাভবান হবে খামারীরা। খামার মালিকের লাভের পাশাপাশি দারিদ্রতা ঘুচবে খামারের শ্রমিকদের।