Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পদ্মার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা উচ্ছেদ আতঙ্কে গোয়ালন্দে রেল লাইনের পাশে আশ্রয় নেওয়া দুই শতাধিক পরিবার

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ বাজার স্টেশন থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫কিঃ মিঃ এলাকায় রেললাইনের পাশে আশ্রয় নেওয়া দুই শতাধিক নদী ভাঙনের শিকার পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ বছরসহ গত কয়েক বছরে উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম এলাকায় ভয়াবহ পদ্মার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারগুলো এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
জানাগেছে, গত ১৩ই ডিসেম্বর সকালে রাজবাড়ী রেলওয়ের উর্দ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী(কার্য্য) মোঃ জুয়েল মিয়া গোয়ালন্দ ফিড মিল এলাকায় রেল লাইনের পাশে দিন মজুর শাহিন শেখের নির্মাণাধীন একটি ঘর ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। ৩বছর আগে শাহিন শেখ এখানে এসে একটি কাচা ছাপড়া ঘর তুলেছিলেন। সম্প্রতি কিছু সঞ্চিত টাকা ও কিছু ধার দেনা করে তিনি এখানে একটি টিনের ঘর তুলছিলেন। কিন্তু ঘরের ডোয়া (মেঝের চতুর্দিকের কাচা অংশ) ইট দিয়ে গাথায় তা ওই কর্মকর্তার নির্দেশে ভেঙে দেয়াসহ পুরো ঘরটিই ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এ সময় অসহায় শাহিন ও অন্যান্যরা ঘরটি না ভাঙার এবং আরো শত শত পরিবারের অসহায়ত্ত্বের কথা তুলে ধরলে তিনি সমস্ত ঘর-বাড়ী ভেঙে দেয়ার হুমকী দিয়ে চলে যান।
পরে তারা গোয়ালন্দ বাজার স্টেশন সংলগ্ন রেলগেইট এলাকা থেকে আঃ সালাম নামের এক ক্ষুদ্র কলার ব্যবসায়ী ও মালেক নামের অপর এক ব্যক্তির ডিম বিক্রির মোট দুইটি টং দোকান ভেঙে দেন।
সরেজমিন আলাপকালে স্থানীয় হাবিবুর রহমান(৫৫), সুলতান মোল্লা(৫০), আঃ হালিম শেখ (৬৫)সহ অনেকেই জানান, ১৯৮১-১৯৮২ সালের দিকে রেলের গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত লাইনটি প্রজার সম্পত্তির উপর দিয়ে স্থাপন করে। ক্ষতিপূূরণ দেয়া হলেও রেলওয়ের অধিকৃত জায়গা আজ পর্যন্ত রেলওয়ের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়নি। এখনো পূর্বের মালিকদের নামে রেকর্ডভূক্ত রয়েছে। এরা ছাড়াও এলাকার হতদরিদ্র ও নদী ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলো নিরুপায় হয়ে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও এখানে আশ্রয় নিয়ে আসছে।
দৌলতদিয়া ঘাটের হকার মিলন বেপারীর স্ত্রী আসমানী খাতুন(২৫) জানান, দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট এলাকায় নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিরুপায় হয়ে রেল লাইনের পাশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কোলে ৬/৭ মাস বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। এখান থেকে উচ্ছেদ করে দিলে অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
রেলের ধারে থাকা লাল বানু বেগম(৫৫), আমেনা খাতুন(৪৫), আঃ জলিল (৬০)সহ অনেকেই দাবী করেন সরকার তাদের অন্য কোথাও পূনর্বাসন করুক। এরআগে যেন তাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ না করা হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করেন, মাঝে মধ্যেই স্থানীয় জিআরপি পুলিশের অসাধু কতিপয় সদস্য, রেলের পরিচয়ধারী লোকজন ও দালাল শ্রেণীর কিছু টাউট অসহায় লোকদের উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী রেলওয়ের উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী(কার্য্য) মোঃ জুয়েল মিয়া জানান, রেলওয়ের পাশে ঘর-বাড়ী তুলে বসবাস করাসহ যেকোন পাকা স্থাপনা তৈরী করা সম্পূর্ন অবৈধ। কেননা এতে ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটাসহ দুর্ঘটনার আশংকা বেড়ে যায়।
গোয়ালন্দ এলাকায় রেলওয়ের পাশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।