Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী ডিবি পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়লো অভিনব প্রতারক॥গাড়ীর কাগজ চুরি করে চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই তার পেশা

॥আশিকুর রহমান॥ কখনো নিজেকে বড় কোন কোম্পানীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে, কখনোবা নিজের স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আনার কথা বলে প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ভাড়া করতো সে।
এরপর কৌশলে চালককে দিয়ে দোকান থেকে কিছু আনতে পাঠিয়ে গাড়ী থেকে রেজিস্ট্রেশন কপি ও লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করে লাপাত্তা হয়ে যেতো। পরে চালকের মোবাইলে ফোন করে কাগজ ফেরৎ দেয়ার বিনিময়ে ১০/১৫ হাজার টাকা দাবী করে তা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতো। অভিনব এই প্রতারকের নাম মিজান খান ওরফে ফারুক(২৭)। সে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার ভাতগাঁও গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে।
গতকাল ১৯শে মে সকালে রাজবাড়ী ডিবি পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েছে এই প্রতারক। এ সময় তার কাছ থেকে ৫৬ পিস ইয়াবা এবং বেশ কিছু সংখ্যক গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন কপি, লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাইক্রোবাস চালক পাবনার সুজানগর উপজেলার হাবিল শেখ বলেন, আমি একটি ভাড়া মাইক্রোবাস চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করি। প্রায় এক মাস আগে সুজানগর মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে নিজেকে একটি নামিদামী কোম্পানীর সুপারভাইজার পরিচয় দিয়ে আমার গাড়ী ভাড়া করে মিজান। তখন সে জানায় কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে তার কোম্পানীর একজন কর্মকর্তা অসুস্থ্য অবস্থায় রয়েছে, তাকে নিয়ে আবার সুজানগর আসতে হবে। কুষ্টিয়ায় সেই হাসপাতালের কাছে যাওয়ার পর মিজান আমাকে ২০০ টাকা দিয়ে পাশের হোটেল থেকে খেয়ে আসতে বলে। আমি খেয়ে আসার পর দেখি সে গাড়ীতে বসে আছে। এরপর সে আমাকে বলে আপনি একটু বসেন, আমি হাসপাতাল থেকে দেখে আসি কতক্ষণ পর স্যারকে রিলিজ দিবে। সে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি দেখি গাড়ীতে থাকা আমার মোবাইল, রেজিস্ট্রেশন কপি, লাইসেন্স ও ১০ হাজার টাকা নেই। আমি আমার পকেটে থাকা আরেকটি মোবাইল দিয়ে আমার ওই নম্বরে ফোন দিলে ফোনটি কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেয়। তখন আমি ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমন কোন লোক সেখানে ভর্তি নেই। তাতে আমি বুঝতে পারি যে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি বিষয়টি আমার গাড়ীর মালিককে জানাই। তিনি আমাকে গাড়ী নিয়ে সুজানগর চলে আসতে বলেন। আমি মাঝ রাস্তায় এলে একটি নম্বর থেকে মিজান আমাকে ফোন করে বলে গাড়ীর কাগজ ফেরৎ পেতে চাইলে তাকে বিকাশে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এরপর সে আমাকে বার বার ফোন করতে থাকে। একপর্যায়ে আমি তাকে কিছু টাকা বিকাশ করি। সে একটি জায়গার নাম বলে জানায়, ওখানে গাড়ীর কাগজ রাখা আছে। কিন্তু আমি ওই জায়গায় গিয়ে গাড়ীর কাগজ পাইনি। এভাবে সে আমার কাছে আরও টাকা দাবী করে ঘুরাতে থাকে। অবশেষে আমার গাড়ীর মালিক এ বিষয়ে সুজানগর থানায় একটি জিডি করেন এবং জানতে পারেন মিজানের শ্বশুরবাড়ী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়। পরে আমরা গাড়ীর কাগজ ফেরৎ পেতে রাজবাড়ী ডিবি পুলিশের সহযোগিতা চাই। অবশেষে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
রাজবাড়ী ডিবির ওসি কামাল হোসেন ভূইয়া জানান, গাড়ী চালক হাবিল শেখকে দিয়ে প্রতারক মিজানকে ফোন করিয়ে গাড়ীর কাগজ ফেরৎ দিয়ে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজবাড়ীতে আসতে বলা হয়। গতকাল রবিবার সকালে সে রাজবাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠ এলাকায় টাকা নিতে এলে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। এ সময় তার কাছ থেকে ৫৬ পিস ইয়াবা এবং বেশ কিছু সংখ্যক গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন কপি, লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। শুধু ড্রাইভার হাবিল শেখের সঙ্গেই নয়, অভিনব এই প্রতারক প্রায় শতাধিক গাড়ীর চালককে এভাবে বোকা বানিয়ে গাড়ীীর কাগজ চুরি করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সে মাদকের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।