Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বালিয়াকান্দির নারুয়া ইউপির মধুপুরে বৃদ্ধাশ্রমের নামে চলছে ছাগল পালন !

॥হেলাল মাহমুদ/দেবাশীষ বিশ্বাস॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে পারিজাত বৃদ্ধাশ্রমের নামে চলছে ছাগল পালন।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ‘ভুয়া’ এই বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে কিছুই জানে না। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধুপুর গ্রামে ২০১৭ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ‘পারিজাত এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকেই কয়েকজন করে এতিম শিশুকে লালন-পালন করা হলেও সেখানে বৃদ্ধাশ্রমের কোন কার্যক্রম এ পর্যন্ত চালুই হয়নি। অথচ বৃদ্ধাশ্রমের নামে দেশী-বিদেশী অনুদান এনে আত্মসাত করা হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে ১৭ জন ছেলে ও ১৫ জন মেয়েসহ মোট ৩২ জন এতিম শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন প্রাক-প্রাথমিক, ৪ জন ১ম শ্রেণীতে, ৩জন ২য় শ্রেণীতে, ৬জন ৩য় শ্রেণীতে, ৫জন ৪র্থ শ্রেণীতে এবং ৩জন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে আশেপাশের স্কুলে পড়ে। এদের দেখাশোনা ও লেখাপড়া করানোর জন্য ৪জন স্টাফ আছে, তাদের মধ্যে ২জন পুরুষ ও ২জন মহিলা। মহিলা স্টাফদের একজনের সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে, বাকী ৩জন অবিবাহিত। তারাও এতিমখানায়ই থাকে।
গতকাল ১৪ই মে বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার ২জন স্টাফ শিশুদের পড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর স্টাফদের আরেকজন আসেন। অপরজন ছুটিতে রয়েছেন। টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকলেও এতিমখানায় নেই কোন বাবুর্চি বা প্রহরী।
স্টাফরা জানান, তারাই বাচ্চাদের সহযোগিতা নিয়ে রান্না-বান্না করেন। পাশের পুকুরে বাচ্চাদের নিয়ে গোসল করান। তবে রান্নার স্থান, শিশুদের পোশাক, টয়লেট, এমনকি গোসলের গামছাও খুব নোংরা। গোসল করার জন্য তেল-সাবানও নেই। একটু বড় আকৃতির দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘরেই শিশু ও স্টাফদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা, ঘুমানোসহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। পাশাপাশি এক কক্ষে ছেলেরা ও পুরুষ স্টাফরা এবং আরেক কক্ষে মেয়েরা ও মহিলা স্টাফের থাকার ব্যবস্থা।
এই এতিমখানার সাথেই বৃদ্ধাশ্রমের জায়গায় করা হয়েছে ছাগলের ঘর। সেখানে বেশ কিছু ছাগল রয়েছে। এতিমখানার স্টাফ ও শিশুরাই সেগুলোর লালন-পালন করে। ছাগল বিচরণের কারণে পুরো এলাকা জুড়ে দুর্গন্ধে ভরা। এর মধ্যেই অসহায় শিশুদের থাকতে হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের স্টাফ মোঃ টিপু বলেন, কোন জায়গা থেকে বা কিভাবে ফান্ড আসে তা আমরা তার কিছুই জানি না। আমরা এখানে চাকরী করি। মাসে ৭হাজার টাকা করে বেতন পাই। আমাদের বেতনসহ প্রতিষ্ঠানের সব খরচ প্রতিষ্ঠানের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে আসে।
‘বৃদ্ধাশ্রমের জায়গায় ছাগল পালন কেন’-জানতে চাইলে শিমুল সরকার নামের আরেক স্টাফ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের আয়ের জন্য কিছু ছাগল পালন করা হয়। ইতিপূর্বে ২জন বৃদ্ধা এসে কিছুদিন ছিল। পরে তারা চলে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াছেল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘কিছু বাচ্চা-কাচ্চা দেখা গেলেও এখানে যে কি হয় তা আমরা বলতে পারবো না। এ বিষয়ে কখনো আমাদেরকে কিছু জানানো হয় না। তবে শুনেছি এই প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশ থেকে অনেক টাকা আসে।’
নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আমার বাড়ীর পাশে হলেও আমি তাদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। অন্ততঃ জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করার দরকার ছিল। এর আগে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ার এবং শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে। আমি যতদূর জানি প্রশাসনও বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা উচিত।’
বালিয়াকান্দি থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় একজন স্টাফকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এছাড়া সেখানকার একটি প্রতিবন্ধী শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে খোঁজ নিতে বলেছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে যদি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও থানার ওসি’কে খতিয়ে দেখতে বলেছি। ইতিমধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের কোন অনুমোদন নেই। তাদের ব্যাপারে আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অবৈধ বা অননুমোদিত কিছু পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’