Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে ৩০টি অনুমোদনহীন কারখানায় রং ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরী হচ্ছে নিম্নমানের আইসক্রিম॥কর্তৃপক্ষ নীরব

॥আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার প্রায় ৩০টি অনুমোদনহীন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে আইসক্রিম। এসব আইসক্রিম খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ ও শিশুরা।
সরেজমিনে রাজবাড়ী শহরের ডিম্পল মিল্ক ভিটা আইসক্রিম, সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ের জমজম আইসক্রিম ও মদিনা সুপার আইসক্রিম এবং খানখানাপুরের রুচি আইসক্রিম কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে তৈরী করা হচ্ছে আইসক্রিম। অপরিশোধিত পানির সঙ্গে চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে স্যাকারিন, আর গরুর দুধের পরিবর্তে গুড়ো দুধ। আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে নিম্নমানের রঙ। অপরিচ্ছন্ন বালতিতে খালি হাতেই মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক সব উপকরণ। পানি রাখার হাউসে রয়েছে দীর্ঘ পুরনো লবণ মেশানো নোংরা পানি। হাউসের ঢাকনা দেওয়া হয়েছে কাঠ দিয়ে। তৈরী করা আইসক্রিমে পড়ছে ধুলোবালি আর শ্রমিকের ঘাম। অস্বাস্থ্যকর এসব আইসক্রিম বাহারী সব মোড়কে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। দোকানে প্রতিটি আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। প্রচন্ড তাবদাহে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও খাচ্ছে এই আইসক্রিম। এসব খেয়ে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
কারখানার মালিকদের কেউ কেউ অনুমোদন না থাকা এবং আইসক্রিমে অস্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। কেউ আবার ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়েই অনুমোদন আছে বলে দাবী করেছেন।
জমজম আইসক্রিম ফ্যাক্টরীর মালিক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘অনেক বড় বড় কারখানাতেই বিএসটিআই’র লাইসেন্স নেই। আর আমরা তো ছোট কারখানা। যদি লাইসেন্স করতে হয় তাহলে করে নেব।’
ডিম্পল মিল্ক ভিটা আইসক্রিম ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার দাবী করেন, ‘আইসক্রিম তৈরী করতে স্যাকারিন ব্যবহার করতেই হয়। স্যাকারিন ছাড়া আইসক্রিম তৈরী হয় না। তাই স্যাকারিন ব্যবহার করি। তবে স্যাকারিনের সঙ্গে চিনিও ব্যবহার করা হয়।’
অপরদিকে মদিনা সুপার আইসক্রিম ফ্যাক্টরীর মালিক লক্ষ্মী বেগম দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়েই তার কারখানার অনুমোদন আছে বলে দাবী করেন।
অস্বাস্থ্যকর এসব আইসক্রিমের ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডাঃ শাহনিমা নার্গিস বলেন, আইসক্রিমে অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করার কারণে এগুলো খেয়ে মানুষের ডায়রিয়া ও টায়ফয়েড জ্বর হচ্ছে। চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন ব্যবহার করার কারণে চিনির যে ফুড ভ্যালু সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। স্যাকারিন হচ্ছে এক ধরণের কেমিক্যাল, যার নাম হচ্ছে সালফোনামাইট। এই কেমিক্যাল মানুষের শরীরে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন, স্ক্রিনের ক্ষতি, ডায়রিয়া ও শ্বাসের সমস্যাসহ নানা ক্ষতি করে। নির্দিষ্ট ফুড কালারের পরিবর্তে আইসক্রিমে নিম্নমানের যেসব রং ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এই রং ক্যান্সারের একটা বড় উৎস হচ্ছে, যা দীর্ঘ সময় খেলে ক্যান্সার হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া এই রং খাওয়ার ফলে শিশুদের আচরণে খিটখিটে ভাব হয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, বিএসটিআই’র যে সকল ম্যানডেটরি প্রোডাক্ট আইটেম রয়েছে তার মধ্যে আইসক্রিম অন্যতম একটি প্রোডাক্ট। অর্থাৎ আইসক্রিম তৈরী করতে অবশ্যই বিএসটিআই’র অনুমতি লাগবে। কিন্তু রাজবাড়ীতে আমরা যতগুলো আইসক্রিম কারখানা দেখেছি তাদের একটিরও বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই। তারা ঘনচিনি ও রঙ ব্যবহার করে আইসক্রিম তৈরী করছে। যে কারণে আমরা সবাইকে সতর্কতামূলক জরিমানা করছি। তাদেরকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। এরপরেও যদি তারা আমাদের কথা না শোনে তাহলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।