Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বিএনপির জঙ্গী তোষণ ও পৃষ্ঠপোষকতাই জঙ্গীবাদ নির্মূলের সবচেয়ে বড় বাঁধা—তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ তথ্য মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির জঙ্গী তোষণ ও জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতাই দেশে জঙ্গীবাদ নির্মূলের সবচেয়ে বড় বাধা।
গতকাল ৫ই মে দুপুরে রাজধানী ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘জঙ্গীবাদ নির্মূলে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ তার বক্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ভারতে জঙ্গী হামলা হলে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল সেটিকে জাতীয় দুর্যোগ মনে করে তা মোকাবিলার জন্য সরকারের পাশে দাঁড়ায়, আর আমাদের দেশে আমরা দেখি, জঙ্গীদেরকে একটি বড় রাজনৈতিক দল থেকে তোষণ ও পোষণ করে রাজনৈতিক মিত্র ও সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং তাদেরকে জঙ্গী তৎপরতার জন্য সাহায্য করা হয়, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। এমনকি ২০ দলীয় ঐক্যজোটে সম্পৃক্ত এমন নেতাও রয়েছেন যারা জঙ্গীবাদের ওপর আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং তাদের শ্লোগান ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে হাওয়া ভবন, তারেক রহমান এবং তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল, তা আজ আদালতে প্রমাণিত। মর্মান্তিক বিষয় যে, ২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলা নিয়ে তৎকালীন সংসদে হাস্যরসও করা হয়েছে। ‘বাংলা ভাই’কেও ‘বাংলা ভাই’ হয়ে ওঠার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বিএনপি।’ মন্ত্রী বলেন, ঠিক এইভাবে বিএনপি ও ২০ দলীয় ঐক্যজোট ক্রমাগতভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য জঙ্গীবাদীদের ব্যবহার করেছে এবং যখনই জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তখনই তারা এর বিরোধিতা করেছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শামীম ওসমানসহ আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীদের ওপর জঙ্গী হামলা করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১২ই আগস্ট বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা করা হয়েছে। এ সমস্ত কিছু মোকাবিলা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে শান্তি ও উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
জঙ্গীবাদকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা বলে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপূর্ণ দেশে মসজিদে নামাজরত অবস্থায় মানুষের উপরে হামলা করে নির্বিচারে হত্যা ও তার সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার, শ্রীলঙ্কায় হোটেল এবং গীর্জায় নৃশংস বোমা হামলা, যেখানে আমাদের শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান-এর মতো শিশুও নিহত হয়েছে, এমন জঙ্গীবাদী ঘটনা আমাদের মর্মাহত করে। কিন্তু এ কথা সত্য যে, বিশ্বের উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চেয়েও জঙ্গীবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশী সফল হয়েছেন। তার নেতৃত্বে আমরা জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদকে দমন করতে সক্ষম হয়েছি।
মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার নিজের জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্র শিবির আমাকে দু’বার ধরে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। একবার রটেই যায়, আমি নিহত হয়েছি। আর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার চল্লিশটি স্পিøন্টার এখনো আমার শরীরে। আরো হাজারো স্পিøন্টার শরীরে বহন করে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছেন আরো অনেকেই, মহিলা আওয়ামী লীগের অনেক এমন সদস্যও রয়েছেন।
তথ্য মন্ত্রী এ সময় জঙ্গীবাদ নির্মূলে সমাজ ও সংস্কৃতির ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, ‘শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব নয়। পারিবারিক শিক্ষা ও বন্ধনকে দৃঢ়তর করা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে শিশু কিশোরদের অধিক সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বিশেষ অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিকী সম্মানিত অতিথি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত প্রধান আলোচক এবং অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা ওয়াহিদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ।