॥চঞ্চল সরদার॥ মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদ, রাজবাড়ীর আয়োজনে গতকাল ১৯শে এপ্রিল জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে কবি সম্মিলন, গুণীজন সংবর্ধনা ও কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ করা হয়। তরুণ কবি সোহেল রানা ও লেখক-কবি মনোয়ার হোসেন মনিসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কবিরা তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
বিকালে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা সভা ও গুণীজনদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি সালাম তাসিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ীর কৃতি সন্তান বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার(অতিরিক্ত সচিব) রাম চন্দ্র দাস, বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম-সেবা, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফকীর আব্দুর রশীদ, কবি ও ছড়াকার স.ম শামসুল আলম ও নাসিরনগর সরকারী কলেজের অধ্যাপক জামিল ফোরকান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার(অতিরিক্ত সচিব) রাম চন্দ্র দাস বলেন, আমরা আমাদের সংস্কৃতিটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে বাঙালীর ঐতিহ্য থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে লোকই পাওয়া যায় না, অথচ রূপবানদের নিয়ে আসা হলে লোকের অভাব হয় না। এ প্রজন্মের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই মীর মশাররফ হোসেন সম্পর্কে জানে না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বই পড়ে না। তারা আকাশ সংস্কৃতি আর সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যম নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থাকে। এই ক্ষত সারাতে হবে। নৈতিক অবক্ষয় রোধে সবাইকে সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সংস্কৃতি বান্ধব। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মনীষীদের জন্ম-মৃত্যু ও স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজবাড়ীতে প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক অডিটোরিয়ামটি নির্মিত হলে এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধি পাবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে মীর মশাররফের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীও পূরণ হবে। সুন্দর এই আয়োজনের জন্য মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদকে এবং উপস্থিত সকল লেখক, কবি, সাহিত্যিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সর্বপ্রথম মীর মশাররফ হোসেনের কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি।
তিনি কবি, গল্পকার, গীতিকার, সুরকারসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার কর্ম চিরকাল আমাদেরকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে বইমুখী হতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করতে হবে। নিয়মিতভাবে আজকের মতো আয়োজন করতে হবে।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম,পিপিএম-সেবা বলেন, স্কুল জীবন থেকেই আমি মীর মশাররফ হোসেনের লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে যেসব নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তা আমাদের চলার পথকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে হবে। শিকড় থেকেই আমাদেরকে নির্যাস নিতে হবে।
আলোচনা সভার আগে প্রবন্ধ পাঠ করেন ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক রশীদ আল কামাল। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস।
আলোচনা সভার শেষে কবি আব্দুল মান্নানকে মীর মশাররফ সাহিত্য পদক এবং কবি রমজান সাবেরী ও খোকন মাহমুদকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।