Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা পুলিশের আয়োজনে ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে সচেতনতা র‌্যালী-পথসভা অনুষ্ঠিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘ট্রাফিক পক্ষ মেনে চলুন, নিরাপদে বাড়ী ফিরুন’-শ্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল ১৮ই এপ্রিল সকালে সচেতনতা র‌্যালী ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালীটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ১নং রেলগেটের বটতলা মঞ্চে পথসভায় মিলিত হয়।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম-সেবার সভাপতিত্বে পথসভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান ও জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ রকিবুল হাসান পিন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পথসভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(হেডকোয়াটার) মোঃ ফজলুল করিম, রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার, ডিবির ওসি মোঃ কামাল হোসেন ভূইয়া, জেলা বিশেস শাখার ডিআইও-১ মির্জা আবুল কালাম আজাদ, ডিএসবির পরিদর্শক মোঃ আলমগীর হোসেন, জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ এবং জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
পথসভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, যে কোন সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সকলের জন্য বেদনার। এর মাধ্যমে সকলেই কম-বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে কারণে আমাদের সকলেরই ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেশী। এর প্রধান কারণ আমরা গাড়ীর মালিক, চালক, জনগণ কেউই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানি না। আবার যারা জানি তারাও মানতে চাই না। সে জন্য আমাদের দুর্ঘটনা বেশী ঘটে। কয়েকদিন আগে রাজবাড়ী শহরের হাসপাতাল সড়কের সারের গোডাউন এলাকায় বালুবাহী ট্রাকের চাপায় এক বাক-প্রতিবন্ধী রিক্সা চালক মারা গেলেন। সেই ঘটনায় দেখা গেল, চালক অদক্ষ লাইসেন্স বিহীন হেলপারের হাতে তার ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় ঐ রিক্সা চালক নিহত হলেন। এ ক্ষেত্রে মালিক ও চালক উভয়ের অজ্ঞতা ও ইচ্ছামত যাকে-তাকে দিয়ে গাড়ী চালানোই প্রধান কারণ। মোটর সাইকেল চালকদের অনেকেই আছেন ট্রাফিক আইন জানাতো দূরে থাক, তাদের অনেকের লাইসেন্স পাওয়ার বয়সই হয় নাই। বাবা-মা তার আদরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানটিকে মোটর সাইকেল কিনে দিয়ে মারাত্মক ভুল করছেন। অনেক সময়ই এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক মোটর সাইকেল চালকরা দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনায় তাদের দোষ না থাকলেও লাইসেন্স না থাকায় বাবা-মায়েরা তার সন্তানের বিচার পাচ্ছেন না। এ জন্য আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করবো তারা যেন তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের মোটর সাইকেল কিনে না দেন। পরিবহন মালিকদের বলবো তারা যেন হেলপার দিয়ে তাদের গাড়ী না চালান এবং কোন চালককে দিয়ে আট ঘন্টার বেশী গাড়ী না চালান। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে দুর্ঘটনা রোধে রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ জনগণসহ গাড়ী চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তা চলাচলের এবং রাস্তায় চলার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-পিপিএম(সেবা) বলেন, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অসংখ্য মায়ের বুক খালি হচ্ছে। যারা এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে বা যারা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে এই ছোট্ট দেশে তাদের পরিচয় বের করলে দেখা যায় তারা কোন না কোনভাবে আমাদের আত্মীয় বা আপন জন। আমাদের এই আপনজনরা যাতে ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা না যায় বা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায় সেই জন্য আমাদের সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ ট্রাফিক আইন মেনে না চলা বা সচেতনার অভাব। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই আজ থেকে এই ট্রাফিক পক্ষ পালন শুরু হচ্ছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে জনগণের অসচেতনার অভাবের কারণে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তা পার হওয়ার সময় চালক গাড়ী থামাচ্ছে না বা গতি কমাচ্ছে না, পাার্কিং প্লেস ব্যতীত রাস্তার উপর গাড়ী রাখছে, লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মোটর সাইকেল চালাচ্ছে, আঠোরো বছর হওয়ার আগেই গাড়ী চালাচ্ছে, চালক অসচেতনভাবে হেলপারের হাতে গাড়ী ছেড়ে দিচ্ছে, চালকরা নেশা করে গাড়ী চলাচ্ছে, মালিক অধিক লাভের আশায় চালকদের যাচাই না করে তার হতে গাড়ী ছেড়ে দিচ্ছে- এ রকম হাজারও সমস্যা রয়েছে। যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সকল দিকে খেয়াল রেখে রাস্তায় চলাচলকারী সকলকে দেশের ট্রাফিক আইন অনুযায়ী গাড়ী চালালে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি এই ট্রাফিক পক্ষ চলাকালীন সময়ে বা ভবিষ্যতে রাস্তায় কোন মালিক হেলপার দিয়ে গাড়ী চালালে বা কাগজপত্র ছাড়া কোন গাড়ী রাস্তায় বের করলে চালকসহ মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হেলমেট, লাইসেন্স বা কাগজপত্র বিহীন কোন মোটর সাইকেল রাস্তায় পাওয়া গেলে সেগুলো ডাম্পিং করা হবে বলে সকলকে সতর্ক করে দেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ীসহ সারা দেশে(১৬-৩০শে এপ্রিল) এই ট্রাফিক পক্ষ পালন করা হচ্ছে।