॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২০শে মার্চ সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম মোঃ তৈমুর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মজিনুর রহমান, সদ্য যোগদানকৃত বিসিকের এজিএম আসিফুল হাসান এবং টিটিসি’র বিদায়ী অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, মার্চ মাস বাংলাদেশীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। ১৯৭১ সালে এই মার্চ মাসের ২৬ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আবার এই মার্চ মাসের ১৭ তারিখে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। ১৯৭১ সালে এই মার্চ মাসের ৭ তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এই মার্চ মাসের ২৫ তারিখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস গণহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছিল। এছাড়াও এই মার্চ মাসে পতাকা দিবসসহ বেশ কিছু দিবস রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ৭ই মার্চ ও ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস অত্যন্ত সুন্দরভাবে পালন করেছি। আগামী ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসে রাজবাড়ীর লোকসেড বদ্ধভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনসহ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৪শে মার্চ ৩য় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শতভাগ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে জেলার ৪টি উপজেলায় আঠারশত পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি আনসার, র্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন যাতে শতভাগ নিরপেক্ষ হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। নির্বাচনে জনগণের ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হবে তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের বক্তব্য মোতাবেক অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য জেলা প্রশাসককে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে অনেক বিভাগের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ সেহেতু আমি আশা করি এই কমিটিতে জেলার যে সমস্ত কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তারা এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন। জেলার উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদে এ বছর সাড়ে ৬ কোটি টাকা অনুদান এসেছে। আমি আশা করি জেলা পরিষদ এই টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কালুখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী কিছুদিন আগে কালুখালী উপজেলায় যে বাসস্টান্ডটি রাতের আঁধারে যাদের সহযোগিতায় ধ্বংস করা হয়েছে তারা কাজটি মোটেও ঠিক করেনি। এই স্থাপনাটি ধ্বংসের ফলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসহ ওই এলাকার জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির সময় যাত্রীরা ওই ছাউনীতে আশ্রয় নিতে পারত। এখন তাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। আবার জেলা পরিষদ কর্তৃক মামলার কারণে নতুন করে যাত্রী ছাউনী তৈরী করাও যাচ্ছে না। এ অবস্থায় যদি সম্ভব হয় আমি জেলা পরিষদকে অনুরোধ করব জনসাধারণের অসুবিধার কথা চিন্তা করে ঐখানে না হোক একটু দূরে একটি যাত্রী ছাউনী করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪টি ফেজের উন্নয়ন কাজের মধ্যে গোয়ালন্দ মোড় থেকে শ্রীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হলেও বাকী তিন ফেজের কাজের অগ্রগতি একেবারেই কম। বাস টার্মিনাল থেকে জেলখানা পর্যন্ত এবং বাগমারা থেকে ধাওয়াড়া ফেরী ঘাট পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের কাজের অগ্রগতি একেবারেই কম। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের হয়ে যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার বালু ও পাথর না পাওয়ায় কাজ বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছে। একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোন জায়গা থেকে বালু এনে কাজ করবে বা পাথর আনবে সেটা তাদের বিষয়। আমাদের দেখতে হবে কাজের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে। ফোরলেন কাজের জন্য রাজবাড়ী পৌরসভার বান্দিন্দাদের ধুলাবালুর কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলখানা থেকে পাংশার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত কিছুদিন কাজ ভালো গতিতে চললেও বর্তমানে কাজের গতি খুবই মন্থর। এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে সড়ক বিভাগ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বেড়ীবাঁধের স্থায়ীকরণের যে প্রকল্প করা বাস্তবায়ন হচ্ছে সেই কাজের যে অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল সেটাও হয়নি। এই কাজের অগ্রগতি দেখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ যারা পরিদর্শনে এসেছেন তারা সকলেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। ৪টি ড্রেজার দিয়ে নদীর খনন কাজ করার কথা খাকলেও তারা ২টি ড্রেজার দিয়ে কাজ করছে এবং যে পরিমাণ সিসি ব্লক তৈরী হওয়ার কথা ছিল সেটিও হয়নি। শুধু বালুর বস্তা ফেলা ও নদী পারের মাটি লেভেল করার কাজ এখন পর্যন্ত যে পরিমাণে হওয়ার কথা সেই পরিমাণে হয়েছে। যদি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে সিসি ব্লক ফেলার কাজ করা না হয় তবে নদীর ¯্রােতে যে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে সেগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে এবং মাটি লেভেলের যে কাজ করা হয়েছে সেটি ধুয়ে যাবে। এতে প্রকল্প বস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। সেই অর্থ ছাড় করাতে করাতে প্রকল্পের বারোটা বেজে যাবে।
এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের কাজের গতি আরো বাড়ানোসহ আগামী বর্ষার আগেই কাজের অগ্রগতি যাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানচ্ছি। বেড়ীবাঁধের সিসি ব্লক করা যে অংশটি ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিসহ পুরনো অংশটি মেরামত করার জন্য নব্বই কোটি টাকার একটি প্রকল্প কিছুদিনের মধ্যে পাশ হবে বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে আমি পনি উন্নয়ন বোর্ডের সচিবসহ মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজবাড়ীর দুগ্ধ খামারীদের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই পাংশায় মিল্ক ভিটার একটি ডিপো(দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) স্থাপিত হবে। তাতে এ অঞ্চলের দুগ্ধ খামারীরা উপকৃত হবে।
এছাড়াও সভায় এলজিইডির বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি, বিভিন্ন সরকারী বিভাগে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, মডেল মসজিদ, কালুখালীর বিভিন্ন রাস্তায় অতিরিক্ত লোডের বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তার ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পাসপোর্ট অফিস নতুন ভবনে স্থানান্তর, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন, কৃষি প্রণোদনা ও বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন, মাদক বিরোধধী অভিযানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভা শেষে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি)’র অধ্যক্ষের যশোরে বদলী জনিত কারণে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে ফুল ও উপহার দিয়ে বিদায় জানানো হয়।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা
