Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী মাছ-মাংস ও তরকারী বাজার সেড ভেঙ্গে পড়ার আশংকা॥ঝুঁকিতে চলছে ব্যবসা॥পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সীমাহীন ভোগান্তি

আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী বাজারের জরাজীর্ন মাছ, মাংস ও তরকারী বাজার সেডের বেহাল দশা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ার মাধ্যমে হতাহতের আশংকা থাকলেও রাজবাড়ী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ৩টি সেডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যবসা পরিচালনা করছে।
সরেজমিনে মাছ, মাংস ও তরকারী বাজার সেডে ঘুরে দেখা যায়, মাছ-মাংস ও তরকারী বাজারের একাংশের বৃহৎ সেডটির অধিকাংশ পিলার ভেঙ্গে রড বের হয়ে আছে। যে কোন সময় সেডটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সর্বক্ষণ কাদা-পানি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ক্রেতাদের বাজার করতে হচ্ছে। মাছ বাজারের আড়তদার ও বিক্রেতাদের প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলন না হওয়ায় ক্রেতাদের চলার পথের উপরেই যত্রতত্র বসে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। মাংস বাজারেও বিক্রেতাদের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এর ফলে মাংসের দোকানীরা যেসব ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাংস কাটার কাজ করে সেখানেও সামান্য অসর্তকতায় যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মুরগী বাজারের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের পথের উপরেই মুরগীর ড্রেসিং করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে যে মুরগী বাজার গড়ে উঠেছে সেখানে যত্রতত্র মুরগী রাখা এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাজ সারতে হচ্ছে।
তরকারী বাজারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মাছ বাজারের একাংশে সেডে তরকারী বাজার গড়ে উঠেছে। চাল বাজার থেকে তরকারী বাজারে যাওয়ার রাস্তাও তরকারী ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে।
এই দুরবস্থার বিষয়ে মাছ বাজারের আড়তদার ও মাছ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে মাছ বাজারে ছোট-বড় মিলে প্রায় আড়াই শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী রয়েছে। পূর্বের তুলনায় বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সংখ্যা বহুগুণ বাড়লেও মাছ বাজার সম্প্রসারণ করার পরিবর্তে উল্টো বাজারের অর্ধেকের মতো অংশ নিয়ে তরকারীর বাজার করায় মাছ বাজার অনেক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাই অনেক মাছ বিক্রেতাই জায়গার অভাবে বাজারে ক্রেতাদের চলার পথের উপর বসে মাছ বিক্রি করছে। মাছ বাজারে সেডের টিন ও সিমেন্টের কলাম (খুঁটি)গুলো অনেক পুরনো হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে, কলামগুলো থেকে সিমেন্ট খসে রড বেরিয়ে গেছে। নিরূপায় হয়ে ব্যবসায়ীদের এই ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীণ শেডের মধ্যেই ব্যবসা করতে হচ্ছে। এই পরিবেশের কারণে ক্রেতারা আগের মতো মাছ বাজারে না আসায় বিক্রেতাদের ফেরী করেও মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাছ, মাংস ও তরকারী বাজার সেডের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিল্ডিং ও সেড তৈরীর দাবী জানিয়ে আসলেও বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকা মেয়ররা শুধু বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু উন্নয়নের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
রাজবাড়ী বাজারকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পরিচ্ছন্ন একটি বাজার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পৌর নাগরিকদের দাবীও দীর্ঘদিনের। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন থাকায় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সচেতন মহল জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, রাজবাড়ী বাজারের জরাজীর্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ মাছ, মাংস ও তরকারী বাজার সেডের ভেঙ্গে ফেলে সেখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সেড/ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভা বর্তমানে আর্থিক সংকটে থাকায় ‘কষ্ট রিকোভারী’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে জরাজীর্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ সেড অপসারণ করে দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা কারণা করেন।