Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীতে র‌্যালী ও আলোচনা সভা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে “নিরাপদ মানসম্মত পণ্য”-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৫ই মার্চ সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালীটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মজিনুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান ও জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলীমুর রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফুল ইসলাম।
এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পারমিস সুলতানা, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসরিন আক্তার, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, এখন যে শিশুটি পৃথিবীর মুখ দেখার অপেক্ষায় আছে সে থেকে শুরু করে যে মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে সে পর্যন্ত এই পৃথিবীর সকল মানুষই এক একজন ভোক্তা। আবার একজন ব্যবসায়ী যিনি একটি জিনিস ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করছেন তিনিও আবার তার প্রয়োজনীয় অন্য জিনিস অন্য কারো কাছ থেকে ক্রয় করছেন। সুতরাং ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই এক অর্থে ভোক্তা। ২০০৯ সালের আগে আমাদের দেশে ভোক্তা বা ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে মানুষের তেমন জানা ছিল না। ২০০৯ সালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের কার্যক্রম শুরু করলে ব্যাপক প্রচারণার সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। পক্ষান্তরে পৃথিবীর উন্নত বিশ্বে এই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত থাকায় এবং সেখানকার ক্রেতারা সচেতন হওয়ায় ক্রেতার নিকট বিক্রেতাদের বিক্রিত পণ্যটির ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টোটি করা হয়। কোন ক্রেতা ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কোন পণ্য ক্রয় করার সময় অধিকাংশ ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় কীভাবে নকল, ভেজাল ও ওজনে কম দিয়ে বা অন্য কোন অসৎ উপায়ে ক্রেতাকে ঠকাবে সেই দিকে তার বেশী আগ্রহ থাকে। অথচ সে কখনও চিন্তা করে না ক্রেতাকে যদি সে সঠিক দামে ভালো পণ্যটি সরবরাহ করে তবে সেই ক্রেতা আরো বেশী উৎসাহী হয়ে তার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পণ্য ক্রয়সহ পণ্যটির ব্যাপারে অন্য ক্রেতাদের কাছে পাবলিসিটির কাজ করবে। এতে বিক্রেতার বিক্রির পরিমাণ আগের থেকে অনেক বেড়ে যাবে। বিক্রেতা ও ভোক্তা দু’জনই উপকৃত হবে। আবার সব বিক্রেতাই যেহেতু ক্রেতা সেই জন্য তাদেরকেও খেয়াল রাখতে হবে তারা যদি ভেজাল পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ভোক্তার ক্ষতি করে তাহলে তারা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যখন অন্য পণ্যের ভোক্তা হবে তাদেরকেও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তাই যারা ব্যবসায়ী আছেন তাদেরকে অবশ্যই ভেজালমুক্ত পণ্য ক্রেতাদের সরবরাহ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা যেহেতু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি সেহেতু উন্নত দেশের মতো ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকার খুবই সচেতন। যদি কোন ব্যবসায়ী ক্রেতাকে ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ, নষ্ট পণ্য ক্রেতাকে না জানিয়ে সরবরাহ করে বা ক্রেতার গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টিযুক্ত পণ্য নিয়ে প্রতারণা করে বা ক্রেতা পণ্য কিনতে গেলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তবে সেক্ষেত্রে ক্রেতা যদি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করে তাহলে সেই বিক্রেতার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিক্রেতাকে যদি কোন জরিমানা করা হয় তাহলে সেই জরিমানার ২৫% অর্থ সেই অভিযোগকারীকে প্রদান করার বিধান রয়েছে। তবে উপযুক্ত প্রমাণসহ ঘটনার সত্যতা থাকতে হবে। মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযোকারীরও জারিমানা হতে পারে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রাজবাড়ী বাজারের একটি ওষুধের দোকানে ১২ টাকার ওষুধ ৮শত টাকায় বিক্রির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ওই দোকানীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই জরিমানার অর্থের ২৫% অর্থ অভিযোগকারীকে প্রদান করা হয়। তাই জেলার সকল ব্যবসায়ীকে স্বচ্ছতার সাথে ক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে।
এছাড়াও সভায় ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা সভার শেষে ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।