Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পুনরায় দখলের আশংকা॥২১ কোটি টাকা ব্যয়ে হড়াই ও মরা কুমার নদীর ৩৫ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে॥মাঠের পানি প্রবাহের সুযোগ রাখা হয়নি

॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানি ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে হড়াই নদীর ৩২.৮৩ কিলোমিটার এবং মরা কুমার নদীর ১৩.১৮ কিলোমিটারের খনন কাজ করছে সরকার।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৯টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই খনন কাজ করছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ চললেও পরিকল্পনার অভাবে জেলার সদর উপজেলা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার বৃষ্টির পানি প্রবাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। দখলদারদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করে নদী খননের কাজ শুরু করলেও স্থানীয়দের আশংকা খনন প্রক্রিয়া শেষ হলেই আবার দখলে যাবে দখলদাররা। নদী দখল করে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইচ গেটের অব্যবস্থাপনা কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা। দীর্ঘ দিন পর নদী খনন হলেও রাজবাড়ী সদর ও বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকরা জানিয়েছেন এই দুই উপজেলার মাঠের পানি প্রবাহের কোন সুযোগ রাখা হয়নি।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে আসা হড়াই নদী খনন করা হচ্ছে। নদীর দুই পাড় দিয়ে বিস্তর মাঠ রয়েছে। নদীকে কেন্দ্র করে বিস্তর মাঠের বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খাল। বৃষ্টিতে কৃষকদের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও মাঠের পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীতে আসার কোন পরিকল্পনা নেই। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের মাশালিয়া এলাকার কৃষক অনুকূল বিশ্বাস বলেন, কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে এ অঞ্চলে আবাদকৃত পেঁয়াজের প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিলের পানি নামার কোন ব্যবস্থা নেই। বরং খালের পানিই মাঠে এসেছে।
নায়েব আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, মাশালিয়া ব্রীজের নীচ দিয়ে হড়াই নদীর দুই পাশে বালিয়াকান্দি ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিস্তর মাঠ। মাঠের পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না করে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই খাল খনন কৃষকদের কোন কাজেই আসবে না।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে রেখে সুবিধা নিয়েছে। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এই খাল খনন করছে কিন্তু দখলদারারা বলে বেড়াচ্ছে খনন শেষে তারা আবারও দখলে যাবে।
হড়াই নদীর রাজবাড়ী অংশের রবীন্দ্রনাথ হালদার নামের এক দখলদার বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। নদী আমাদের দখলেই থাকবে। আরেক দখলদার বলেন, আমাদের দখলের থাকা নদীর খনন কাজ সরকার নিজের প্রয়োজনে সম্পন্ন করছে। নদীটি বৈধ কাগজপত্র মূলে আমাদের দখলেই থাকবে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সাউথ ইস্ট প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৪৬ কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। আশা করছি বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই নদী খননের কাজ শেষ হবে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার ফলে পানি প্রবাহ হতো না। আশা করছি সেটা ঠিকমতো হবে। কৃষকদের পানি প্রবাহের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, দখলদাররা অনেক প্রভাবশালী হয়। আমরা চেষ্টা করবো নদীকে দখলমুক্ত রাখতে।