॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী পাম্পে বকেয়া পড়েছে ২১ লাখ টাকা। সে কারণে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাম্প কর্তৃপক্ষ। ফলে গত ২১শে ফেব্রুয়ারী থেকে ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের দু’টি এ্যাম্বুলেন্স।
এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে বার বার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
সরকারী এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় রোগীদের বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স ও ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে করে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হচ্ছে স্বজনদের। এতে কয়েকগুণ বেশী খরচ পড়ছে।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন শাহজাহান মোল্লা বলেন, এখানে সরকারের দেয়া ২টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। জেলার সাধারণ মানুষেরা স্বাস্থ্য সেবার জন্য জরুরী রোগীকে ফরিদপুর বা রাজধানী ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারী এ্যাম্বুলেন্স স্বল্প খরচে ভাড়া করে। কিন্তু হাসপাতালের দু’টি এ্যাম্বুলেন্সই বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।
নতুন বাজার এলাকা থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মোঃ মামুন শেখ বলেন, তেলের সংকট দেখিয়ে ১৫দিন ধরে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স দু’টি বন্ধ রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত যেন এর সমাধান করে এ্যাম্বুলেন্স দু’টি চালু করা হয়।
রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় হয়তো বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে রোগীকে ফরিদপুর/ঢাকা নেয়া যায়। কিন্তু গভীর রাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আর কোন ব্যবস্থা নেই। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স যখন মানুষ ভাড়া করে তখনই তো তার ভাড়া পরিশোধ করা হয়। কিন্তু তেলের টাকা বাকি পড়ে কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসা রতন প্রামানিক বলেন, রোগী নিয়ে এসেছি। তাকে জরুরীভাবে ফরিদপুরে রেফার করেছে। এখন শুনছি সরকারী এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ। বড় বিপদে পড়ে গেলাম।
হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মাইনউদ্দিন মোল্লা বলেন, তেলের টাকা বাকি পড়ায় পাম্প থেকে তেল দিচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রেখেছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দেখে আমার নিজেরও খারাপ লাগছে।
হাসপাতালের আরেক এ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, প্রতি মাসে এ্যাম্বুলেন্স দু’টিতে দেড় থেকে দুইশত জরুরী রোগী রেফার হয়ে ফরিদপুর ও ঢাকায় যায়। রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাড়া ৬৬০ টাকা এবং ঢাকার ভাড়া ২হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে প্রাইভেট গাড়ীর ভাড়া রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে কমপক্ষে ২হাজার টাকা এবং ঢাকায় ৭/৮ হাজার টাকা।
সদর হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেন জানান, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তেলের পাম্পে বাকী ১৪ লক্ষ ৩২ হাজার ২৫৬ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাকী ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার ২২০ টাকা। দুই অর্থ বছরে মোট বাকী পড়েছে ২১ লক্ষ ১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এ বিষয়ে গত ৭ই ফেব্রুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অথ বিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারী তেলের পাম্পে অনুরোধ করে বলা হয়েছিলো যেন জনস্বার্থে তেল সরবরাহ চালু রাখেন। তা স্বত্ত্বেও পাম্প থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় এ্যাম্বুলেন্স দু’টি বন্ধ আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দীপক কুমার বিশ^াস জানান, এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাশর্^বর্তী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকায় অনেক রোগী রেফার করা হয়ে থাকে। এ জন্য অন্যান্য জেলার তুলনায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স বেশি চলাচল করে। এতে তেলের পরিমাণও বেশি লাগে। পাম্পে তেলের টাকা বাকী পড়ায় তারা তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুতই আমরা এর সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি।
তবে জরুরী রোগীদের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রসহ অন্যান্য সরকারী দপ্তরের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ব্যবস্থার কথা জানালেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলী আহসান তুহিন।