Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

সেনা ও নৌ বাহিনীর ৮মিনিটের প্যারা কমান্ডো অভিযানে॥বিমান ছিনতাই নাটকের অবসান, অস্ত্রধারী নিহত

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাই নাটকের অবসান হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অস্ত্রধারী যুবক মাহাদী নিহত হয়েছেন।
গতকাল ২৪শে ফেব্রুয়ারী রাত পৌনে নয়টায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, লেঃ কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বে সেনা ও নৌ বাহিনীর ৮মিনিটের প্যারা কমান্ডো অভিযানে এই ছিনতাইয়ের ঘটনার অবসান হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে একটা বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। এই ছিনতাই নাটকের অবসান হয়েছে সফলভাবে। আজ বিকাল পাঁচটা ৩৩ মিনিটে আমাদের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিমানবাহিনী জানতে পারে যে, বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছে। ককপিট থেকে আমাদের পাইলট এটি জানান। বিমানটি পাঁচটা ৪১ মিনিটে এখানে অবতরণ করে। এরপর এখানে নিয়োজিত বিমান বাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সমন্বয়ে ইমার্জেন্সি পদক্ষেপ নেয়া হয়।’
ছিনতাইকারী একজন বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে। তার বয়স আনুমানিক ২৫/২৬ বছর।
মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘ছিনতাইকারীকে নিভৃত করার জন্য আমাদের কমান্ডো বাহিনী প্রথমে তাকে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর স্বাভাবিক অ্যাকশন যেটা, সেটাই হয়েছে। আমাদের সাথে গোলাগুলিতে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত এবং পরবর্তীতে মারা যায়।’ এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোনো যাত্রী হতাহত হননি। তিনি বলেন, এই অভিযানে নেতৃত্বদানকারী লেঃ কর্নেল ইমরুল রাজধানীর হলি আর্টিজান অভিযানেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘বিমানের ১৩৪ জন যাত্রী এবং ১৪ জন ক্রু সদস্যসহ মোট ১৪৮জন ছিলেন। তাদের সকলেই অক্ষত অবস্থায় বিমান থেকে বের হয়ে এসেছেন। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি এবং বিমানটি তল্লাশি করি, এটিকে ইতোমধ্যেই চলাচল বা উড়ার জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।’
কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, ‘এই অল্প সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে যতটুকু কথোপকথন হয়েছে, সে শুধু একটি দাবিই করেছিল। সে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। এরপর আর তার সাথে কোনো কথা বলার সুযোগ আমাদের ছিল না, যেহেতু দ্রুততর সময়ে এই ছিনতাইয়ের অবসান ঘটাতে চেয়েছিলাম।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা বলতে চেয়েছিলেন সেটি জানতে পারেনি অভিযান চালানো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তার পরিবার সম্পর্কেও জানা যায়নি।
তাকে প্রাথমিকভাবে দেখে পাইলট বিদেশী মনে করলেও সে আসলে বাংলাদেশী এবং তার কাছে একটি পিস্তল ছিল বলেও জানানো হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত চট্টগ্রাম বিমানঘাঁটি প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুল রহমান বলেন, ‘সে যাত্রীদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে নাই এবং তার একটাই দাবি ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে চান। এসব কথা নিয়ে আমি তাকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। আমাদের কমান্ডো বাহিনীগুলো যখন আসে তখন আমি তাকে কথার মাধ্যমে ব্যস্ত রেখেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম যে, আপনাকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিবো।’
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। একই সঙ্গে কমান্ডো অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। অভিযান চালানোর কারণে আর কথা বলা হয়নি।
মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘সে হয়তো তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনটি আমাদের দিতো। তার বাড়ি কোথায়, পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত এগুলোর কিছুই আমাদের জানার সুযোগ হয়নি।’