॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্তমান এবং পরপর এই তৃতীয় মেয়াদই তাঁর শেষ মেয়াদ হতে পারে এমনটা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, তিনি তরুণ নেতাদের জন্য জায়গা তৈরি করতে চান।
জার্মানীর সরকারী আন্তর্জাতিক সম্প্রচার কেন্দ্র ডয়েচে ভেলে’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার আমি টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছি এবং এর আগেও আমি প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬-২০০১) ছিলাম। সেদিক থেকে এটি আমার চতুর্থ মেয়াদ। আমি আরো অধিক সময় ধরে আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে চাই না। আমি মনে করি যে প্রত্যেকেরই একটা পর্যায়ে গিয়ে থামা উচিত। যাতে আমরা তরুণ প্রজন্মকে জায়গা করে দিতে পারি।’
পুনঃি নর্বাচিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক কোন সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর মেয়াদের বাকি সময় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখা হবে তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান- এসবই হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা।’
তিনি আরো বলেন, ‘অবশ্যই, প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন চায়। আমরা তা নিশ্চিত করেছি।’
মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশে মুক্ত চিন্তা সমর্থন করেন এবং সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, ‘যদি আপনি বেশি কাজ করেন, তাহলে আপনাকে বেশি সমালোচনা শুনতে হবে।’
এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার কথা প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মেয়াদে ৩শ’ আসনের মধ্যে ২৬০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সুতরাং, অন্যান্য দলও সংসদে রয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কিভাবে এক দলীয় শাসন হতে পারে?
গত সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দলের খারাপ ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি কোন বিশেষ দল জনগণের মন জয় করতে না পারে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে না পারে এবং ভোট না পায়, তাহলে এই দায়িত্ব কার? প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের দুর্বলতা।’
রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে জন্ম গ্রহণ করা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশুর এবং বেকার যুবকের জন্য তাঁর দেশের একটি মধ্য-মেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি দ্বীপ নির্ধারণ করেছি। সেখানে আমরা একটি ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ও ঘর তৈরি করেছি। আমরা তাদেরকে সেখানে নিতে চাই এবং কাজ দিতে চাই যাতে তরুণ ও নারীরা কিছু একটা করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।’
ক্রমানুসারে সমস্যা মোকাবেলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে ভাল কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। এক্ষেত্রে অতি জরুরী ছিল বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও সহায়তা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোপরি শরণার্থীদের তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠনো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা চীন ও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করারও চেষ্টা করছি। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব শরণার্থীকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের কেবলমাত্র ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। প্রকৃতপক্ষে এক সময় তারা দেশে ফিরে গেলে মিয়ানমারের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে একইভাবে ত্রাণ দেয়া যেতে পারে।