॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ কাদা মাটিতে লেগে আছে পন্টুন। পন্টুন থেকে ফেরী রয়েছে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে। মাঝখানে পানির বদলে শুকনো কাদা মাটি। পন্টুনকে আবার ফেরী ভেড়ানোর জন্য প্রস্তুত করার কাজ চলছে। এই চিত্র রাজবাড়ী সদর উপজেলার জৌকুড়া ফেরী ঘাটের।
নাব্যতা সংকটের কারণে গত ১৮ই জানুয়ারী থেকে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর জৌকুড়া-পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরী চলাচল। ঘাট স্থানান্তর ও ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৩দিন, পরে ৭দিন বন্ধ থাকার কথা বললেও ১৭দিনেও তা করতে পারেনি। নদীতে অলস পড়ে আছে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে থাকা ২টি ইউটিলিটি ফেরী। ফলে বন্ধ রয়েছে বাস সার্ভিস ও মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পারাপার হতে হচ্ছে এই নৌরুট ব্যবহারকারী যাত্রীরা।
ফেরীর চালক ও ঘাট সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ঘাটের কাছে ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু আবার ঘাটের কাছেই ফেলায় জেগে উঠা চরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যতা সংকট আর জেগে ওঠা চরের জন্য তারা অপরিকল্পিত ড্রেজিংকেই দুষছেন।
ইউটিলিটি ফেরী ৩৯ এর মাস্টার(চালক) নায়েব আলী বলেন, মাঝ নদীতে যে ড্রেজিং চলছে তার উত্তোলিত বালু পাবনার প্রান্তে না ফেলে জৌকুড়া ঘাট প্রান্তে ফেলা হচ্ছে। ঘাটের কাছে এই বালু ফেলায় চর জেগে উঠছে। বর্তমানে পন্টুন থেকে ফেরী ৩০০ ফুট দূরে অবস্থান করছে। ফেরী চালাতে পারছি না। অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের কারণেই আমাদের এই ঘাট ২সপ্তাহের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।
ফেরী সুগন্ধা ৩৪ এর মাস্টার ইয়াছিন মোল্লা বলেন, সমাধানের জন্য জৌকুড়া ঘাটের যে অংশে চর জেগেছে তা খনন রতে হবে। পন্টুনে ফেরী ভেড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ফেরী ঘাট বন্ধই থাকবে। আমরাও ফেরী চালাতে পারব না।
জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ফেরীর ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন বলেন, জৌকুড়া ফেরী ঘাটের সামনে যে ড্রেজিং মেশিন বসানো হয়েছে তা দিয়ে ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু ঘাটের পাশেই ফেলা হচ্ছে। সেই বালু গড়িয়ে চর জেগে ঘাটটি বন্ধ হয়ে গেছে। পাইপটা যদি ঘুরিয়ে উত্তোলিত বালু পাবনার প্রান্তে ফেলতো তাহলে ঘাটের আজকের এই পরিণতি হতো না। সাধারণ মানুষকেও দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলজার মন্ডল বলেন, জৌকুড়া ফেরী ঘাটটি প্রায় ২৫ বছর ধরে চলছে। ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু এই প্রান্তেই ফেলছে। বালু জমে ঘাটটি অচল হয়ে রয়েছে। মানুষের ভোগান্তি চলছে।
পাবনার সাগরকান্দি থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে আসা আব্দুল মোতালেব বলেন, ফেরী বন্ধ-তাই বাধ্য হয়ে লঞ্চেই মোটর সাইকেল উঠিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছি। দ্রুত এই রুটের ফেরী চলাচল স্বাভাবিক করা হোক।
গোপালগঞ্জ থেকে শাহজাদপুরগামী সুকুমার সেন বলেন, ফেরী বন্ধ থাকায় আমরা দুভোগের মধ্যে আছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরী চালু করা হোক-এটাই আমাদের চাওয়া।
সিরাজগঞ্জ-ঝালকাঠি রুটে চলাচলকারী নবীন বরণ পরিবহনের সুপারভাইজার রমজান আলী বলেন, জৌকুড়া ঘাট বন্ধ থাকায় অন্য পথে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হবে। অতিরিক্ত সময় ও তেল খরচ হবে। ঘাটটি দ্রুত চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, পদ্মা নদীতে পানি কমার সাথে সাথে নাব্যতা কমে যাওয়ায় পন্টুন মাটিতে ঠেকেছে। পন্টুন থেকে নদী এখন ৩০০ ফুট দূরে। এমন অবস্থায় গত ১৮ই জানুয়ারী থেকে ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘাটের ইজারাদারের লোকসান হচ্ছে। যাত্রীরা ঘাটে এসে ফিরে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে নদী পার হতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, দ্রুত পন্টুন স্থানান্তরের মাধ্যমে ঘাট সচল করার কাজ চলছে। ড্রেজিংয়ের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না তা স্টাডি ছাড়া বলা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ফেরী চলাচল শুরু হয়েছিল। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২টি ইউটিলিটি ফেরী ও ২টি লঞ্চে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হতো।