॥ স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার যুগ্ম-সম্পাদক এডঃ মোঃ আব্দুল মান্নান আর নেই। গত ১৩ই ডিসেম্বর দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি—–রাজেউন)।
জানাগেছে, রাত ১১টার দিকে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে এডঃ আব্দুল মান্নানকে রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গার বাসভবন থেকে প্রথমে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইসিজি করার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে দ্বিতীয় দফায় ইসিজি করার সময়ই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজবাড়ী শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী তার বাসভবনে ভিড় জমায়। দুপুর পৌনে ১২টায় মরদেহ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেয়া হলে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এবং সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরীসহ জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পন করে। সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় মরদেহ জেলা বার এসোসিয়েশন প্রাঙ্গনে আনা হয়। সেখানে জেলা বার এসোসিয়েশন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবী সহকারী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন তার মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পন করে।
জেলা বার এসোসিয়েশন প্রাঙ্গনে আয়োজিত প্রথম জানাজায় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আইনজীবীগণ, বিচারক মন্ডলী ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তার মৃত্যুতে আদালত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে এবং আদালতের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
সেখান থেকে মরদেহ রাজবাড়ী খানকা শরীফ বড় মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজায় শতশত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাযা’র পূর্বে সেখানে রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই কাদেরীয়ার সভাপতি কাজী ইরাদত আলী বক্তব্য রাখেন।
এরপর বিকেলে মরদেহ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের মতিয়াগাছি গ্রামের নিজ বাড়ীতে নেওয়া হলে শতশত নারী-পুরুষ তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভীড় জমায়। বাদ আসর তার প্রতিষ্ঠিত মতিয়াগাছি খানকা শরীফ মসজিদ প্রাঙ্গণে শেষ জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এডঃ আব্দুল মান্নান ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। রাজবাড়ী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস নির্বাচিত হন। আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের পর জেলা আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সদালাপী, মিষ্টভাষী এই নেতা আইনজীবী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে আইন পেশায় জড়িত হওয়ার পর একাধিকবার আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও সরকারী তালিকায় তার নাম না থাকায় (মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াধীন) তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়নি।
এডঃ আব্দুল মান্নানের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ৪ মেয়ে, ৭ ছেলে ও স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজন ও বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম, সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই কাদেরীয়ার সভাপতি কাজী ইরাদত আলী, জেলা আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।