Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করব—পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন/রফিকুল ইসলাম॥ পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, এমপি গতকাল ২২শে জানুয়ারী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্পের(ফেইজ-২) চলমান কাজসহ সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি পাটুরিয়া ঘাট থেকে স্পীডবোটযোগে গোয়ালন্দ হয়ে রাজবাড়ীর গোদার বাজার ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। গোদার বাজার ঘাট এলাকায় তিনি সাংবাদিদের সাথে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-২) সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দায় শহর রক্ষা প্রকল্পে এসে পৌঁছালে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী তাকে স্বাগত জানান। পরে উড়াকান্দা স্কুল মাঠে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান, প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান খুলনা শীপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আনিসুর রহমান, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের চীফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম ওহেদ উদ্দিন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও খুলনা শীপয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি রাজবাড়ী জেলার নদী ভাঙ্গন কভলিত অঞ্চল ও রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-২) এর কাজের অগ্রগতি সরেজমিন দেখার জন্য এসেছি। আমি বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমে আমার নিজ জেলা শরীয়তপুরের নদী ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করি, তারপরই আমি দ্বিতীয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আজ রাজবাড়ী জেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করছি। পরিদর্শনকালীন সময়ে ও এর আগে রাজবাড়ী জেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চল ও প্রকল্প সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি এবং আজকে গোয়ালন্দ থেকে রাজবাড়ী আসার সময় যতটুকু দেখলাম তাতে বোঝা যাচ্ছে গোয়ালন্দের দেবগ্রামের নদী তীরবর্তী অংশ, রাজবাড়ী বরাট ইউনিয়ন ও মিজানপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গাসহ রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেইজ-১) এর বেশ কিছু জায়গা মারাত্মক ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এসব ভাঙ্গন যাতে রাজবাড়ী জেলার সাধারণ মানুষের জন্য কোন ক্ষতির কারণ না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করব। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ(ফেইজ-২) প্রকল্পের আওতায় যে ১০ লক্ষ ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কথা সেগুলো আগামী মার্চের মধ্যে ফেলতে হবে, এর সঙ্গে ব্লক তৈরী করে সেগুলোও যথাযথ জায়গায় স্থাপন করার কাজ করতে হবে। যেহেতু প্রকল্পটি শেষে হতে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত সময় লাগবে সেই জন্য এর আগে জিও ব্যাগ ফেলে ফেইজ-২ এর মধ্যে সকল জায়গার ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে হবে। ফেইজ-১ এর যে সকল অংশে ভাঙ্গন কবলিত হয়েছে সেগুলো যাতে আগামী বর্ষার আগে মেরামত করা যায় সেই জন্য কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ফেইজ-২ এর কাজ করার জন্য যে ড্রেজিং করা হচ্ছে সেই ডেজিংয়ের মাটি ফেইজ-১ এর ভাঙ্গন কবলিত স্থানে এবং ফেইজ-২ প্রকল্পের মধ্যে যে সকল স্কুল, মসজিদ ও বসতবাড়ী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানে ফেলা হবে। গোয়ালন্দের দেবগ্রাম থেকে রাজবাড়ীর ফেইজ-২ প্রকল্পের শেষ পর্যন্ত ও গোদার বাজার থেকে ধাওয়াপাড়া পর্যন্ত ভাঙ্গন প্রতিরোধে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা প্রদান করেছি যাতে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে ২টি ডিপিপি করে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ভাইয়ের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। যাতে আমরা আগামী বন্যার আগে এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রকল্প দুটি পাশ করতে পারি। সেই লক্ষ্যে যা যা করা দরকার তা করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেছি।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী শহর রক্ষা(ফেইজ-২) প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি যতটুকু হওয়ার কথা ছিল তার থেকে কম হয়েছে। আমি আশা করব আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং প্রকল্প কাজের গুনগতমান যদি ঠিক না থাকে বা কোন প্রকারের দুর্নীতি করা হয় তবে সে যে লেভেলের কর্মকর্তাই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন প্রকার দুর্নীতি সহ্য করা হবে না, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম কেবিনেট মিটিংয়েই আমাদেরেেক বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভারি নৌযান চলাচলে ড্রেজিং নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে আমরা সেগুলো রাজবাড়ীর সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে সমস্যার সমাধান করব। এখানে আসার পর বিষয়টি নিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ আগামীতে নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কোন কোন অঞ্চল এর আওতায় পড়বে সে সম্পর্কে অবগত করেন।