॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আগামী ১৯শে জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন (২য় রাউন্ড) উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পুষ্টি সেবার বাস্তবায়নে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে গতকাল ৯ই জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা পর্যায়ের অবহিতকরণ ও পরিকল্পনা সভা সিভিল সার্জন অফিসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সের সভাপতিত্বে সভায় অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডাঃ সুবোধ কুমার কুন্ডু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ দীপক কুমার বিশ্বাস, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস, সদর হাসপাতালের মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ একেএম গোলাম ফারুক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন(২য় রাউন্ড) এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস.এম.এ হান্নান এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন এমওসিএস ডাঃ কাজী শফিউল আজম শুভ। সভা সঞ্চালনা করেন সিভিল সার্জন অফিসের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোকরেমা মাঞ্জুরা।
এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ তোফাজ্জেল হক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী, জেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) শামসুন্নাহার বেগম, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলীমুর রেজাসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও এনজিও প্রতিনিধিগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব তুলে ধরে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সসহ বক্তাগণ বলেন, জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন (২য় রাউন্ড) আমাদের দেশের ৬ মাস থেকে ৫বছর পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিটামিন ‘এ’ মানুষের শরীরে তৈরী হয় না। এই ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। ভিটামিন ‘এ’ আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন দুধ, ছোট মাছ, ডিম, মাংস বা কলিজা অথবা উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য যেমন যেকোন সবুজ, হলুদ ও লাল জাতীয় সাক-সবজি ও ফলমূল খেয়ে পূরণ করতে হয়। আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কম হওয়ায় অনেক মানুষই তাদের শিশুদের জন্য আমিষ জাতীয় খাদ্য, সাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়াতে পারে না। যার কারণে অধিকাংশ শিশু ভিটামিন ‘এ’র অভাবে ভোগে। শিশুদের এই ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে সরকার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের ৬ মাস থেকে ৫ বছরের প্রতিটি শিশুকে বিনা খরচে সরকারীভাবে প্রতি বছর ২বার করে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়াচ্ছে। প্রতিটি শিশুকে এই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উপর তারা গুরুত্ব আরোপ করেন।
উল্লেখ্য, এই ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করে না বলে এই ক্যাপসুল খাওয়ালে শিশুদের কোন শারীরিক ক্ষতি হয় না। অনেক সময় শিশুরা খালি পেটে, অসুস্থ শরীর নিয়ে এই ক্যাপসুল খেলে তার দুর্বলতার জন্য কিছুটা খারাপ লাগতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে-যা অল্প সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার সময় অবশ্যই ভরা পেটে খেতে হবে। যে শিশুরা অসুস্থ তাদেরকে ডাক্তারের পারামর্শক্রমে খাওয়ানোই ভালো। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর যদি কোন শিশু বেশী অসুস্থ বোধ করে তাহলে স্বাস্থ্য কর্মী, নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল বা সিভিল সার্জন অফিসের মনিটরিং সেলে যোগাযোগ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতীতে অনেক কুচক্রী মহল সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য অপপ্রচার চালিয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। জেলার সকলকে এই ধরনের গুজবে কান না দিয়ে যদি কোন শিশু অসুস্থ হয় তবে ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মী, যে কোন সরকারী হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বা সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পেইনের দিন রাজবাড়ী জেলার ৫টি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র, পৌরসভাসহ ১০৬৩টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ও ৬টি অতিরিক্ত কেন্দ্রসহ সর্বমোট ১০৭৪টি কেন্দ্রে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুদের ১লক্ষ আই ইউ ক্ষমতার ১টি করে ‘নীল’ রঙের এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ২লক্ষ আই ইউ ক্ষমতার ১টি করে ‘লাল’ রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। শিক্ষকসহ ২১৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৩৯৩জন সরকারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী এবং ১৭০জন সুপারভাইজার এই কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন।