॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে গতকাল ১৪ই ডিসেম্বর রাজবাড়ীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় লোকোসেড বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান খান এবং সহকারী কমিশনার(ভূমি) সানজিদা শাহনাজসহ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
এরপর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা’র নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, সহকারী পুলিশ সুপার(অপরাধ) লাবিব আব্দুল্লাহ, ডিআইও-১ মির্জা আবুল কালাম, সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তগণ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এরপর সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে লোকোসেড বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধের সামনে স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আব্দুল জলিল, অন্যান্যের মধ্যে মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন উদ্দিন বতু, যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম বাকাউল ও জেলা জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ নিজাম মন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা প্রশাসকের সহধর্মিনী মর্জিনা বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান খান, সহকারী কমিশনার(ভূমি) সানজিদা শাহনাজ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা-বোনসহ সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, শহীদ বৃদ্ধিজীবী দিবস আমাদের জন্য একটি কলংকিত দিন। এই দিনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী এদেশীয় রাজাকার-আলবদররা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আজকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার কারণে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারছি। এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদ বৃদ্ধিজীবী দিবস কী এসব নিজেরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন জানলে হবে না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষর্থীদেরও জানতে-জানাতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালী মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ সরাসরি দখলদার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। যখন পাকিস্তানী বাহিনী বুঝতে পারলো তাদের পরাজয় নিশ্চিত তখন তারা এদেশকে মেধাশূন্য করতে ১৪ই ডিসেম্বর তাদের এশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের দ্বারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কুটনীতিকসহ অনেককে হত্যা করে। শুধু সেটাই নয়, তারা রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। আজও সেই হত্যাকারী খুনী অপরাধীর দল বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় খুনীরা ও ষড়যন্ত্রকারীরা অতীতে যেমন সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও সফল হবে না।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বক্তার দাবীর প্রেক্ষিতে বলেন, যেহেতু লোকোসেড বদ্ধভূমিতে আসার কোন রাস্তা নেই, তাই আমি সর্বাত্মকভাবে যাতে এখানে আসার রাস্তা হয় সেই চেষ্টা করবো। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে এই বদ্ধভূমির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।
আলোচনা সভার শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য রাজবাড়ীতে দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
