Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

জয়িতা প্রকাশনীর ‘শেখ হাসিনাঃ বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি’ শীর্ষক সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর বিশেষ প্রকাশনা হস্তান্তর

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনুষ্ঠেয় ‘শেখ হাসিনা ঃ বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি’ শীর্ষক সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর বিশেষ প্রকাশনা গতকাল ১৮ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন জয়িতা প্রকাশনীর সত্বাধিকারী সাংবাদিক ইয়াসিন কবির জয়। এ সময় সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র ফটো সাংবাদিক সাইফুল কল্লোল।
নন্দিত বিশ্বনেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবন, সংগ্রাম ও পথচলার সচিত্র বিবরণ সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে জয়ীতা প্রকাশনীর এই উদ্যোগে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম (১৯৮১-১৯৯০), ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ, কূটনৈতিক সাফল্য ও স্বীকৃতি, মানবতার প্রতিকৃতি এবং অন্য আলোয়- এই আট ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত হয়েছে ৫শতাধিক সংবাদচিত্র।
“শেখ হাসিনা ঃ বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি” ঃ শীর্ষক সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর ১৯৯২ পরবর্তী সময়কালের অধিকাংশ সংবাদচিত্রই ফোকাসবাংলা নিউজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইয়াসিন কবীর জয়ের তোলা। বঙ্গবন্ধু কন্যার শৈশব আর কৈশোরের দুর্লভ কয়েকটি ছবি পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত। আর পঁচাত্তরপূর্ব এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরবর্তীকালের ধারণা দিতে সমকালীন আলোকচিত্রীদের তোলা ছবি সংযোজিত হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে রয়েছে আলহাজ্ব জহিরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলম, রশীদ তালুকদার, রফিকুর রহমান, পাভেল রহমান, এ কে এম মহসিন, আব্দুল করিম, আবু তাহের খোকন, দেবুপ্রসাদ বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম কল্লোল, মীর ফরিদ, নিহার সিদ্দিকী, এবিএম আকতারুজ্জামান, হাসানুজ্জামান তরুণ ও সুমন দাসের ছবি। এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনা ও অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত নাম না জানা আরো অনেকের আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যে আট ক্যাটাগরিতে প্রদর্শনীর সংবাদচিত্রগুলো বিন্যস্ত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ-
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঃ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার শৈশব থেকে জাতির জনকের হত্যার পর ১৯৮০ সালে তাঁর লন্ডন অবস্থান পর্যন্ত সময়ে দুর্লভ প্রায় ২৫টি ছবি রয়েছে এই পর্বে। এখানে আছে মা-বাবার, ভাই-বোনের সঙ্গে পারিবারিক অন্তরঙ্গতার দৃশ্য। বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সংসদে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সংবর্ধনা, ১৯৬৯ সালে কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে রাজপথে নেমে মিছিলে অংশগ্রহণ, বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে নববধূ বেশে। আর সেই চরম দুঃসময়ে ১৯৮০ সালে লন্ডনে পরিবারের সবাইকে হারানো দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শোক-বেদনায় মলিন মুখচ্ছবি।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঃ জাতির দুঃসময়ে যেন পরিত্রাণকারীর ভূমিকা নিয়েই তিনি দেশে ফিরলেন এক বৃষ্টিভেজা দিনের শেষ প্রান্তে, ১৯৮১ সালের ১৭ই মে। বিমানবন্দর তখন জনারণ্য তাঁর প্রতীক্ষায়। সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তসহ বেশ কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে এই পর্বে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম (১৯৮১-১৯৯০) ঃ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরলেন, তখন আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুপ্ত। দেশ তখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারীদের মৃগয়াভূমি। মানুষের পেটে ভাত নেই। নেই বাক্্স্বাধীনতা। নেই ভোটের অধিকার। ব্যক্তিগত শোক বুকে চেপে শুরু হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম। সেই দিনগুলোর ২০টির বেশি ছবি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। দর্শকেরা দেখতে পাবেন ১৯৮৩ সালের ২২শে নভেম্বর ১৫ দলের পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মহাসমাবেশে তিনি ঘোষণা করছেন- ওই সংসদ জনতার। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৯৮৭ সালে তিনি বসা অবস্থায় তাঁর গাড়িতে রেকার লাগিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নূর হোসেনের মৃত্যুর পরদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারী চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে তাঁর জনসভায় হামলা। এমন অনেক সংগ্রামী মুহূর্ত উঠে এসেছে এই পর্বে।
ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের সঙ্গে সংগ্রামের শেষ হতে না হতেই আবার তাঁকে নামতে হয়েছিল ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সেই আন্দোলনের সাফল্যের পথ বেয়ে দীর্ঘ ২১বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ কলপর্বের বেশ কিছু স্মরণীয় দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফের সমর্থনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষণ। মাগুরায় উপ-নির্বাচনে বিএনপির ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে গণমিছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মহাসমাবেশ, কমনওয়েলথ মহাসচিবের দূত স্যার নিনিয়ানের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা, ১৯৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর সংসদ থেকে ১৪৭জন এমপিসহ পদত্যাগ- এই দৃশ্যগুলো আবার দর্শকদের স্মরণে ফিরিয়ে আনবে গণমানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ সংগ্রামের দিনগুলো।
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ ঃ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সামনে ছিল অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশের মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন থেকে আর্থসামাজিক সব চ্যালেঞ্জ তিনি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করছেন। বাংলাদেশকে যারা বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তারাই আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এখানে তুলে ধরা হলো আশা জাগানো, সাফল্য অর্জন করা উদ্দীপনাময় কিছু মুহূর্ত। দর্শকেরা দেখবেন প্রধানমন্ত্রী হিসবে শপথ নেওয়ার পর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া করছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উৎসবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত ও সুলেমান ডেমিরেলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন, ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় তিনি নিজ হাতে রুটি-স্যালাইন তৈরিতে অংশ নিয়েছেন, অমর একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি, ক্রিকেটের মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি- দেখবেন এমন বেশ কিছু ইতিহাস আলোকিত করা ছবি।
কূটনৈতিক সাফল্য ও স্বীকৃতি ঃ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যও অনন্য। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিবদমান সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার বিজয়, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার সমাধানের কথা সর্বজন বিদিত। তাঁর বিশেষ উদ্যোগে অমর একুশে পেয়েছে ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। এ ছাড়া আধুনিক বিশ্বের জলবায়ু সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এ জন্য বহু আন্তর্জাতিক পদক, পুরস্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। এই পর্ব সাজানো হয়েছে সেই সাফল্যের স্বর্ণালি মুহূর্তগুলো দিয়ে। এখানে তুলে আনা হয়েছে সমুদ্র বিজয়, ছিটমহলবাসীর মুক্তি, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্তির ছবিগুলো।
মানবতার প্রতিকৃতি ঃ মানবতা ও মানবাধিকারের কথা যে কেবল মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ রাখায় বিশ্বাসী নন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কাছে তার বহু নজির রেখেছেন। বন্যা, জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা ব্যক্তিগত সংকটেও তিনি জ্ঞানী-গুণী থেকে একেবারে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কাছে টেনে নিয়েছেন। সম্ভব সব রকম সহায়তা করেছেন। সর্বোপরি নিজ দেশ থেকে উৎখাত হওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে তিনি সারা বিশ্বে মানবতা ও মানবাধিকারের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এই পর্বে আমরা তুলে ধরেছি মানবতার ডাকে সড়া দেওয়ার কিছু ঘটনা।
অন্য আলোয় ঃ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ভেতরে রয়েছে এক খুবই সহজ-সরল চিরন্তন বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। রাষ্ট্রীয় গুরুদায়িত্ব, দলের নেতৃত্ব এসবের ফাঁকে কখনো কখনো তাঁর সেই রূপটির দু-এক ঝলক প্রকাশ পায়। কবিগুরু যাকে বলেছিলেন ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’, ঠিক তেমনিভাবে এই পর্বের বিশেষ প্রকাশনায় তেমনই কিছু আলোকিত মুহুর্ত তুলে ধরা হয়েছে।