Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে ধীরগতিতে চলছে ফেরী॥মানুষের দুর্ভোগ

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ পদ্মার পানি কমার সাথে সাথে পলি জমে দিন দিন সরু হচ্ছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের চ্যানেল।
পদ্মায় এই নাব্যতা সংকটের কারণে ধীর গতিতে চলছে ফেরী। একমুখী চ্যানেলে ফেরী প্রবেশ করাতে দীর্ঘ সময় লাগায় ঘাট প্রান্তে বাড়ছে যানবাহনের সিরিয়াল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নদীতে ড্রেজিং করছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দৌলতদিয়ার ২টি ঘাট বন্ধ রয়েছে। মাত্র ৪টি ঘাট দিয়ে চলছে ফেরীতে যানবাহন পারাপার। এতে পদ্মা পাড়ি দিতে এসে প্রতিনিয়ত ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে আটকে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। যদিও পদ্মায় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে চলছে খনন কাজ। ফেরী ঘাট কমে যাওয়া ও পদ্মায় জেগে ওঠা ডুবোচরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।
বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি কমার ফলে ঘাট এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এই নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। যে কারনে দৌলতদিয়ায় তিনটি ড্রেজার মেশিন দ্বারা খনন কাজ করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় চার থেকে সাড়ে চার হাজার যানবাহন ও লক্ষাধিক মানুষ পদ্মা নদী পারাপার করা হয়। এই নৌরুটে ১৮টি ফেরী থাকলেও বেশ কিছুদিন যাবৎ বিকল হয়ে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় মেরামতে আছে কয়েকটি ফেরী। মেরামতের পর কয়েকদিন চলার পর আবারও বিকল হচ্ছে ফেরীগুলো।
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী সোহাগ কাজী বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে বাস এসে সিরিয়ালে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে। প্রচন্ড গরমের পাশাপাশি ধুলাবালিতে বেশী ভোগান্তি হচ্ছে। শিশু ও বয়স্ক মানুষগুলোর কষ্ট আরও বেশী। নাব্যতা সংকটে নাকি ফেরী আস্তে চলে, তাই এই অপেক্ষা।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী বাসযাত্রী শামীম রেজা বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে নিয়মিত পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকি। সারা বছরই এই ঘাটে কোন না কোন ভোগান্তি লেগেই থাকে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা আলিফ পরিবহনের চালক বাবু বলেন, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ওরশ যাত্রী নিয়ে এসেছিলাম। পরদিন আবার ঢাকা ফিরতে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি পদ্মা পাড়ি দিতে। কিন্তু সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফেরীর দেখা মেলেনি।
ফেরীর মাস্টাররা বলছেন পদ্মায় নাব্যতা সংকট ও ড্রেজিং করার কারণে ফেরী চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি স্রোতের কারণে সময় লাগছে দ্বিগুণ। আবার ঘাট সংকটেরর কারণে যানবাহনের লোড-আনলোডেও পোহাতে হচ্ছে ঝামেলা।
ফেরী রজনীগন্ধার মাস্টার(চালক) ইকরামুজ্জামান বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরী চালাতে সমস্যা হচ্ছে। পানিতে স্রোতের কারণেও পারাপারে আগের চেয়ে সময় বেশী লাগছে।
ফেরী শাপলা-শালুকের মাস্টার মোঃ বাদশা বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এই কারণে নদীতে ড্রেজিং চলছে। ড্রেজিং চলায় কয়েকটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দৌলতদিয়ারর ৫ ও ৬নং ঘাট বন্ধ। পাটুরিয়া থেকে ফেরী চালিয়ে দৌলতদিয়া পৌঁছে ঠিকমত ঘাট না মেলায় ফেরী ভেড়াতে বেগ পেতে হচ্ছে। যানবাহন লোড-আনলোড করতে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
নাব্যতা সংকটে ড্রেজিং চলায় ঘাট সংকট দেখা দিয়েছে বলে ফেরী চলাচলে অসুবিধার কথা জানালেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ রুহুল আমিন। ’
তিনি বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরী চলাচল করছে। এর মধ্যে রো-রো ৭টি, কে টাইপ ২টি ও ইউটিলিটি ৮টি। নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরী চলাচলে বিঘœ ঘটছে। যার জন্য ফেরীর ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এতে ঘাট প্রান্তে গাড়ীর অপেক্ষার সময় বেড়ে গেছে। নাব্যতা সংকট কেটে গেলে এসব সমস্যারর সমাধান হবে। দৌলতদিয়ার ৬টি ফেরী ঘাটের মধ্যে বর্তমানে ৪টি ঘাটে ফেরী ভীড়তে পারছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে পানি হ্রাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘাটগুলো মিড ওয়াটার স্টেজে অপারেশনে রাখছি। নদীতে ড্রেজিং-এর কাজ অব্যাহত রয়েছে। দৌলতদিয়ায় বর্তমানে ৩টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। নাব্যতা সংকট যতক্ষণ না সমাধান হবে বিআইডব্লিউটিএ ততক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম চালাবে।