সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব-শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গা পৌরাণিক দেবতা। তিনি আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত হন। জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁকে দুর্গা বলা হয়। সমাজে অন্যায়, অবিচার, অশুভ ও অসুর শক্তি দমনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আবহমানকাল ধরে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নানা উপাচার ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে দুর্গাপূজা উদযাপন করা আসছেন।
দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, সামাজিক উৎসবও। দুর্গোৎসব উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী একত্রিত হন এবং অর্চনার পাশাপাশি সকলে আনন্দ-উৎসবে মিলিত হন। তাই এ উৎসব সার্বজনীন। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দুর্গাপূজা আবহমান বাংলার শাশ্বত সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এ মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশে সকল ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্ম ও উৎসব পালন করেন। যার কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে স্মরণাতীত কাল থেকে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। বিশ্বে এ ধরনের দৃষ্টান্ত কোথাও আর পাওয়া যাবে না।
দুর্গাপূজার সাথে মিশে আছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্কর হয়ে উঠুক; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বন্ধনকে আরো সুসংহত করুক এ কামনা করছি। সেই সাথে সুন্দর শরতের শুভক্ষণে নির্মলতায়, নির্ভাবনায় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজবাড়ীবাসীকে জানাচ্ছি শারদীয় শুভেচ্ছা। এ উৎসবের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক রাজবাড়ীবাসী তথা এ দেশের সকল নাগরিকের জীবন।
বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ও বন্ধন অটুট রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এক সাথে কাজ করবো এই হোক আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়।
শারদীয় দুর্গোৎসব, ২০১৮ সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনকে আরও সংহত করবে এই প্রত্যাশা করি।
(মোঃ শওকত আলী)
জেলা প্রশাসক
রাজবাড়ী।