Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীতে র‌্যালী-আলোচনা সভা ও মহড়া অনুষ্ঠিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘কমাতে হলে সম্পদের ক্ষতি, বাড়াতে হবে দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৩ই অক্টোবর সকালে র‌্যালী, দুর্যোগকালীন মহড়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালীতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ শওকত আলী জোয়াদ্দারসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সদস্যগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।
র‌্যালীর শেষে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রেলওয়ে মাঠের পরিবর্তে কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালনায় দুর্যোগকালীন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহড়ায় অগ্নিনির্বাপন ও উদ্ধার কার্যক্রম কিভাবে করা হয় তা দেখানো হয়। মহড়া শেষে বেলা ১১টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ রাকিব খান, অন্যান্যের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ শওকত আলী জোয়াদ্দার, ব্র্যাক প্রতিনিধি নেফাজ উদ্দিন, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম খান নিরব ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্য সুমাইয়া আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আর তার এই সফলতা অর্জনকে আরও এগিয়ে নিতে দেশের জনগণসহ সকলে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রশমন করে আমরা কিভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের সকলকে দুর্যোগ প্রশমনের উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। বন্যা, সাইক্লোন, নদী ভাঙ্গন, ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কি করণীয় সেগুলো আমাদের জানতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজবাড়ী জেলায় অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কিছুদিন আগে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজবাড়ী সফরে এসে বলেছেন, ‘২০ বছর আগে রাজবাড়ীকে আমি যেমন দেখেছিলাম তার থেকে গাছপালায় সমৃদ্ধ রাজবাড়ী জেলা অনেক সুন্দর হয়েছে।’ রাজবাড়ী জেলার এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের যে ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আমাদের সকলকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে রাজবাড়ী শহরের রাস্তাঘাট ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিষয়গুলো সদিচ্ছার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ও আমাদের সচেতনতার অভাবে খরা, অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, বন্যা, ঝড়, নদী ভাঙ্গন, ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। বর্তমানে এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বজ্রপাতের আবির্ভাব হয়েছে। এই বজ্রপাতের কারণে সারা দেশে বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলায়ও অনেক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অধিকাংশ বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা বালিয়াকান্দি উপজেলায় বেশী ঘটেছে। এর কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার ভূমি একটু উঁচু। মানুষ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আমরা কখনোই নির্মূল করতে পারব না ঠিকই কিন্তু বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনতে পারব। আর সেই জন্য আমাদেরকে বেশী বেশী বনায়ন, পরিকল্পিত আবাসন, পরিবেশ দূষণ রোধ করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়নের ফলে রেডিও-টেলিভিশন, মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রদান করা, অধিক পরিমাণে সাইক্লোন সেন্টার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় সে বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার বিভিন্ন বিষয়ে করণীয় তুলে ধরেন।