॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার ২য় দিনে গতকাল ৫ই অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার ও ‘ডিজিটাল সমাবেশ’ এবং ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রযুক্তির ভূমিকা’ ও ‘কৃষি ও কৃষক উন্নয়নের হাতিয়ার’ বিষয়ক সেমিনার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠের মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) মালিহা নার্গিস।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার। আলোচক হিসেবে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মজিনুর রহমান, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ মন্ডল ও রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রভাষক অদ্বৈত কুমার দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ আশেক হাসান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণসহ মেলায় আগত দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মালিয়া নার্গিস বলেন, বাংলাদেশ আজ কোন দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার কারণেই তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সব দিক দিয়েই দেশ আজকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। শুধু দেশেই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণের মাধ্যমে আজকে আমরা মহাকাশও জয় করেছি। দেশে আজ সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যার কারণে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সকল জনগণকে সরকারী সুবিধা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে অসাধ্যকে সাধন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। রাজবাড়ীসহ সারা দেশে আজকে যে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সমস্ত বিষয় সাধারণ জনগণের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। দেশ যাতে আরও এগিয়ে যায় এবং দেশের সর্বসেক্টরে যাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে রাজবাড়ীসহ সারা দেশের উন্নয়ন মেলার বিভিন্ন দিক ও তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তার নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। তখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা শুনে অনেকেই উপহাস করেছিলেন। কিন্তু সাড়ে ৯বছরে বাংলাদেশ আজ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক-নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সর্বপ্রথম এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা প্রদান করেছিলেন তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তারই ধারণা ও বিভিন্ন ধরণের পরামর্শে দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপানন্তরিত হয়েছে। আজকে দেশে সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বসেক্টরে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। আর এই প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মানুষকে আজ সর্বক্ষেত্রে অত্যন্ত সহজভাবে সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে কোথায় কি ঘটছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা তা সহজেই জানতে পারছি। আর এই তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার সকল সরকারী কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলছে। আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অধিকাংশই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যা আমাদের জন্য একটি অনন্য সাফল্য।
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রযুক্তির ভূমিকা এবং কৃষি ও কৃষক উন্নয়নের হাতিয়ার সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সকলের জানা জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর এই পরিবর্তিত জলবায়ুর মধ্যেই আমাদেরকে টিকে থাকতে হবে। আমাদের এসডিজির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় যে বিষয়টি আছে সেটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে ভারতের সাথে আমাদের ছোট-বড় ৫৪টি নদীর আন্তঃসংযোগ রয়েছে। এসব নদী দিয়ে বন্যার সময় বিশাল পরিমাণ জলরাশি আমাদের দেশে প্রবেশ করে পদ্মা-মেঘনা-যমুনাসহ অন্যান্য নদী ছাপিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। যুগ যুগ ধরে এইসব নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারানোর কারণে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন পর্বতের বরফ গলে সেই পানি আমাদের দেশের বিভিন্ন নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণেও বিভিন্ন সময় বন্যা দেখা দিচ্ছে। আমাদের এই বন্যার হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য নদী খননসহ স্থায়ী নদী শাসনের ব্যবস্থা ও বাঁধ নির্মাণ করাসহ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে বেশী বেশী করে গাছ লাগাতে হবে। আমাদের দেশ মূলতঃ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের দেশে অধিকাংশ জমিতে বোরো ধানের চাষ বেশী করা হয়। এটি চাষ করতে অধিক পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। যার জন্য আমরা এই ধান চাষে অধিক মাত্রায় ভুগর্ভস্থ পানি বেশী ব্যবহার করছি। এই পানি অধিক মাত্রায় ব্যবহারের ফলে একসময় ভুগর্ভস্থ পানির প্রবাহ কমে লবণাক্ত পানি সেখানে প্রবেশ করবে। আমাদের এই প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক পানির ব্যবহার বেশী করে করতে হবে। জলবায়ুর প্রভাবের ফলে সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে যে ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হচ্ছে সেটি মোকাবেলায় সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণসহ বেশী বেশী করে গাছ লাগাতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
এ ছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে উন্নয়ন মেলার সকল কর্মকান্ড আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারে শুরুর পর্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতার ও এরপর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সেমিনার শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।