Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠে শুরু হয়েছে ৩দিনব্যাপী ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা।
এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় রাজবাড়ী কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বর প্রদক্ষিণ করে মেলাস্থল বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
র‌্যালীতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আলমগীর হুছাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম পিপিএম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম গোলদার, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ এবং জেলা পুলিশের বাদল দল অংশগ্রহণ করেন।
র‌্যালী শেষে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৯৩টি উপজেলার ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠান মেলার মাঠের মঞ্চ থেকে বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এরপর জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী বিকাল ৩টায় শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ জেলা পর্যায়ের মেলার উদ্বোধন করেন। বিকাল ৪টায় ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি উদ্যোগ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ ও ‘শিক্ষিত জাতি সমৃদ্ধ দেশ-শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, আলোচক হিসেবে রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম গোলদার ও বিআরডিবির উপ-পরিচালক মোঃ তাফজেল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আলমগীর হুছাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম আজম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমীন করিমী, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ ও মেলার দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ আজ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করেছে। আর সেই কারণেই সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ এক অপার সম্ভাবনা ও বিস্ময়কর উন্নয়নের রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে। সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, এ বিষয়ে সচেতন হয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ পুলিশের সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বিগত সময়ে তা কখনো হয় নাই। আর সেই কারণেই পুলিশ বর্তমানে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। দেশে যে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল পুলিশ বাহিনী সরকারের সহযোগিতা নিয়ে সেই জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে সফল হয়েছে। যা আজকে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়াও মাদক নির্মূলে পুলিশ জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তিনি রাজবাড়ী জেলায় ৭মাস দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আগের তুলনায় মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ অনেক কমে এসেছে বলে উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪র্থ বারের মতো আজ সকালে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৯৩টি উপজেলায় কোন কোন সেক্টরে বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে তা দেশের নাগরিকদের সামনে তুলে ধরার জন্য উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেছেন। পূর্বের মেলাগুলো সাধারণত বছরের যে সময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকে না ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা কম থাকে সেই সময় আয়োজন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সকলের মতামতের ভিত্তিতে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলাকে কিছুটা এগিয়ে এনে ডিসেম্বরের পরিবর্তে অক্টোবর মাসে করা হচ্ছে। এবারের উন্নয়ন মেলার লক্ষ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়নের সকল বিষয়কে জনগণের সামনে তুলে ধরা। বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে তাদেরকে এই মেলা উন্নয়নের বিষয়ে ধারণা দেবে। বর্তমানে আমাদের সকলের একটাই প্রশ্ন কিভাবে বর্তমান সরকারের সাড়ে ৯বছরের উন্নয়ন বিগত সময়ের সকল উন্নয়নকে ছাপিয়ে গেছে। এর একটাই কারণ বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে সকল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। যার ফলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে বর্তমান সরকার এমডিজি বাস্তবায়ন ও এসডিজির ১৭টি গোল নিয়ে কাজ করছে। যার মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে একটি বাড়ী একটি খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, গৃহ নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সকলকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
সেমিনার শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঢাকা থেকে আগত যাদু শিল্পীদের পরিবেশনায় যাদু প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, আগামী ৬ই অক্টোবর এই উন্নয়ন মেলা সমাপ্ত হবে। মেলায় প্রায় ১শ’টি স্টল রয়েছে।