॥আবুল হোসেন/হেলাল মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার দুটি প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের মান অভিমান ভেঙ্গে করা হলো এক।
গতকাল বুধবার বিকেলে দৌলদতদিয়া রেলস্টেশন শহীদ মিনার চত্বরের সামনে প্রতিবন্ধী সম্মেলনের মাধ্যমে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে সংগঠন দুটি ভেঙ্গে এক সংগঠন করা হয়। প্রতিবন্ধী সম্মেলনের আয়োজন করে দৌলতদিয়া নুরুল ইসলাম মন্ডল কল্যান ট্রাস্ট।
দৌলতদিয়া প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার বয়স ২০বছর। আর দৌলতদিয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার বয়স ১২বছর। কিন্তু একে অপরের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে তেমন একটা যোগাযোগ ছিলনা। কিছুটা মান অভিমানের কারণে কখন একসাথে অনুষ্ঠানে বসা হয়নি। কোন অনুষ্ঠানও উপভোগ করা হয়নি। মান-অভিমান নিয়ে চলতো সংগঠন দুটি।
গতকাল বুধবার বিকেলে দৌলতদিয়া রেলস্টেশন শহীদ মিনার চত্বরে প্রতিবন্ধী সম্মেলনে দুটি সংগঠনের সকল সদস্যদের দাওয়াত করা হয়। বিকেল চারটার মধ্যে অনুষ্ঠানে হাজির হন দুটি সংগঠনের দেড় শতাধিক সদস্য। এই প্রথম সবাই একত্রে বসে আলোচনায় অংশ নেন। নুরুল ইসলাম মন্ডল কল্যান ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল প্রথমে তাদের একসাথে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনিও তাদের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করেন। শেষে উভয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শুনেন সব সমস্যার কথা। সদস্যরা মান অভিমান ভুলে একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। দায়িত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডলের উপর।
দৌলতদিয়া প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রতন শেখ জানান, তার সংগঠনের বয়স ২০বছর। সদস্য সংখ্যা ৮৪জন। সমিতির সদস্যদের প্রতিদিনের উপার্জিত টাকা দিয়ে চলে সংগঠনটি। কিন্তু তাদের কোন নিজস্ব কার্যালয় নেই। দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের কাছে জেলা প্রশাসকের হেল্পডেস্ক সংলগ্ন একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও কখনো এভাবে সবাই একত্রিত হওয়ার সুযোগ হয়নি। সদস্যদের মধ্যে অন্য সংগঠন নিয়ে কিছুটা অভিমান চললেও কখন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতাম না। চেয়ারম্যানের এমন উদ্যোগে সবাই একত্রিত হতে পেরে নিজের কাছে আনন্দ লাগছে।
দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটের কাছে স্থাপিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মান্নান শেখ জানান, আমরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আজ থেকে প্রায় ১২বছর আগে এই সংগঠনের কর্মকান্ড শুরু করি। সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭০জনের মতো। বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে গেলেও এভাবে আমরা একত্রিত হতে পারিনি। আজকের এ প্রতিবন্ধী সম্মেলনের মাধ্যমে সবাই একসাথে বসে খাওয়া ও নিজেদের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান করতে পেরে খুশি লাগছে। চেয়ারম্যানের ডাকে আমরা একত্রিত হয়েছি। তিনি যা বলবেন তাই মেনে নিব।
উপস্থিত শারীরিক, বুদ্ধি, দৃষ্টি ও শ্রবন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে খাওয়া শেষে আলোচনা সভা ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আশরাফ বয়াতির গানে সবাইকে মুগ্ধ করে। শেষে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুটি সংগঠনের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এ সময় দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস চৌধুরীসহ কল্যান ট্রাস্টের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল ইসলাম মন্ডল কল্যান ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুটি প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে মান-অভিমানের কথা শুনছিলাম। সংগঠন দুটি’র বেশ কয়েকজন সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আজকের এই সম্মেলন। ওদের সবাইকে একত্রে খাওয়া দাওয়া শেষে দুটি কথা শুনে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুই সংগঠন ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
পরে রতন শেখকে সভাপতি, মান্নান শেখকে সহ-সভাপতি, এরশাদ শেখকে সাধারণ সম্পাদক, মুন্নাব শেখকে সহ-সম্পাদক, জহির মন্ডলকে কোষাধ্যক্ষ এবং আইনদ্দিন শেখ ও ছিদ্দিক সরদারকে সাংগঠিনক সম্পাদক করে আগামী তিন বছরের জন্য ২১সদস্য বিশিষ্ট দৌলতদিয়া বহুমুখী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। বাকি সবাই এ সংগঠনের সাধারণ সদস্য হিসেবে থাকবেন।