Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে শিশুসহ ৪নারীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনার রহস্য উম্মোচন করলেন পুলিশ সুপার

॥শিহাবুর রহমান॥ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর, বারবাকপুর ও আটদাপুনিয়া গ্রামে শিশুসহ ৪নারীকে গলাকেটে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম। এর মধ্যে ৬জন আসামীকে গ্রেফতার করাসহ ২টি হত্যাকান্ডের রহস্যও উদঘাটন হয়েছে ।
গতকাল ১৬ই সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, এই হত্যাকান্ডগুলো মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কিছু অনলাইন পত্রিকাতেও বিভ্রান্তিকরমূলক নিউজ এসেছে যে পদ্মা সেতুতে রক্ত লাগবে সে কারণে এসব হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। কিন্তু এসবই ছিল গুজব ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুরে হাজেরা বেগমকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় নিহতের পুত্রবধু স্বপ্না বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ধারায় সে জবানবন্দী প্রদান করেছে। জবানবন্দীতে এ হত্যাকান্ডের সাথে স্বপ্না বেগমসহ ৩জন জড়িত ছিল বলে সে স্বীকার করেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, স্বপ্না বেগমের স্বামী দীর্ঘদিন বিদেশে রয়েছেন। সে কারণে সোহেল নামে এক যুবকের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক তৈরী হয়। এ সম্পর্কের জেরেই এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে স্বপ্না, সোহেল ও কবির নামে আরো একজন জড়িত ছিল। ঘটনার রাতে স্বপ্না নিজে তার শ^াশুরীর হাত ও কবির পা ধরে এবং সোহেল ছুরি দিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ হত্যা মামলায় ইতিপূর্বে সোহেল ও কবিরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে, বানীবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়া গ্রামে আদুরী আক্তার লিমা(২৫) হত্যাকান্ডও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় হয়েছে। ডিবি ও থানা পুলিশ যৌথভাবে ক্লু-লেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য বের করেছে। মূলত সীমানা পিলার নিয়ে লিমার স্বামীর সাথে কয়েকজনের বিরোধ ছিল। এ সীমানা পিলারকে কেন্দ্র করে লিমাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলায় লিমার আপন ও ফুফাতো দেবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও মুলঘর ইউনিয়নের পশ্চিম মুলঘর গ্রামে দাদী শাহিদা বেগম(৪৫) ও নাতনী লামিয়া আক্তার(৭) হত্যাকান্ডও খুব শীঘ্রই উদঘাটন করবো। এটাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, এসব হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অহেতুক কাউকে হয়রানী বা গ্রেফতার করা হয়নি। আমাদের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে সে অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি এসব হত্যাকান্ডের পর বলেছিলাম এ ধরণের মহিলাদের হত্যা কোন সংগঠন করেনি। হত্যাকারীরা এখানেই আছে। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি এবং অল্প সময়ে এসব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খাঁন বলেন, আমরা মাত্র এক মাসের মধ্যেই ক্লু-লেস এ হত্যা মামলা গুলোর রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। এর মূল কৃতিত্ব পুলিশ সুপারের। তার দিক নির্দেশনাতেই আমরা এটা সফলভাবে করতে পেরেছি।
সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, ডিবি’র ইন্সপেক্টর মোঃ কামাল হোসেন ভূইয়া ও পরিদর্শক মোঃ জিয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২রা আগস্ট দিবাগত রাতে পশ্চিম মুলঘর গ্রামে দাদী শাহিদা বেগম(৪৫) ও নাতনী লামিয়া আক্তার (৭)কে গলাকেটে এবং গত ৭ই আগস্ট দিনগত রাতে বানীবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়া গ্রামে নিজ বসত ঘরে আদুরী আক্তার লিমা (২৫)কে গলাকেটে ও গত ১৬ই আগস্ট দিবাগত রাতে আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে হাজেরা বেগম (৪৮)কে গলা কেটে হত্যা করা হয়। মাত্র ১৫দিনের ব্যবধানে এ ৪টি হত্যাকান্ড নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।