॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা গতকাল ৯ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব ও জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি আহমেদ নিজাম মন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশেক হাসান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজবাড়ীর কয়েকটি জায়গায় পরপর কয়েকজন মহিলার হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যাবিনেট ডিভিশনে আলোচনা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে জানিয়েছি হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। যাতে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এগুলো কোন পরিকল্পিত বা আতংক ছড়ানোর জন্য করা হয়নি। প্রতিটি ঘটনাই পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও সম্পত্তিসহ বিভিন্ন বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। যার সবগুলোই তদন্তাধীন রয়েছে। আশা করা যায়, স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই হত্যাকান্ডগুলোর রহস্য উন্মোচিত হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য একটি গোষ্ঠী এই হত্যাকান্ড নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়। তিনি জেলাবাসীকে এই গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী শহরের উপকণ্ঠে গোদার বাজারে পদ্মাপাড়ে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্রসহ শহর রক্ষা বাঁধের কোন কোন অংশে মাত্রাতিরিক্ত স্রোতের ঘুর্ণনের কারণে ডাম্পিং করা বোল্ডারের নীচ থেকে বালু সরে গিয়ে বোল্ডারগুলো সরে গেছে। যার কারণে স্লোপিং বোল্ডারগুলো নীচের দিকে নেমে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাঙ্গনকে রোধকল্পে অস্থায়ীভাবে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীর পানি না কমা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ফেলেই ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। পানি কমলে তা স্থায়ীভাবে মেরামত করার চেষ্টা করা হবে। আর খুলনা শীপইয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে নতুন যে স্থায়ী কাজ করা হবে তাও সঠিকভাবে করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, কিছুদিন পূর্বে সদর উপজেলার ২জন সরকারী প্রাইমারী শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্তের রিপোর্ট আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা যে নিরাপদ থাকার কথা ঠিক তার উল্টোটিই ঘটেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক রক্ষক না হয়ে ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদি সেটি না করা হয় তবে সরকারী কর্মচারী হিসেবে সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক উক্ত সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরকারী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। আমাকে যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় তবে সেটি হবে কঠোর। যার কারণে তাদের কারাবাস পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ঈদে মাওয়া ও জাজিরা ঘাট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রায় ৫হাজার গরুর ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন পারাপার হয়েছে। ওই সময়ে প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ ঘাটে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এছাড়াও সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিভিন্ন মসজিদের মাইক ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন, মাদক, সন্ত্রাস, নাশকতা, বাল্য বিবাহ, আসন্ন দুর্গাপূজা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।