Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতাতেই ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছিল —প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ওই ধরনের জঘন্য হামলা সংঘটিত হতে পারত না।
গতকাল ২৮শে আগস্ট বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই সেই হামলার উদ্দেশ্য ছিল।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সময় গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন নেতাকর্মী এবং ২জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। আহত হয়েছিলেন আরও শত শত নেতা-কর্মী। প্রধান বিরোধী দলের সন্ত্রাস বিরোধী একটি সভায় যে এ ধরনের প্রকাশ্য দিবালোকে যে গ্রেনেড হামলা হতে পারে তার নজির বিশ্বে সম্ভবত আর কোথাও নেই।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মিলন কান্তি দত্ত, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, এডঃ কিশোর রঞ্জন পাল, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ দে, দেবাশীষ পালিত, সুব্রত পাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সারা দেশ থেকে আসা হিন্দু পুরোহিত ও মহারাজসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলাই নয়-২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল এবং সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ বহু ঘটনাই সে সময় ঘটেছে। সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন নৈরাজ্যা, সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলিম, বৌদ্ধ কোন ধর্মের মানুষই তাদের থেকে রেহাই পায়নি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা সে অবস্থা থেকে দেশকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি যেখানে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে তাদের ধর্ম-কর্ম করতে পারছে।
দেশে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান পূজা মন্ডপের সংখ্যার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এমন একটা অবস্থায় দেশকে আনতে পেরেছি যেখানে প্রতিটি উৎসবই আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে। আমাদের স্লোগান ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ এদেশে আর কেউ যেন কোনদিন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তার সরকার ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমঅধিকারে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও নিজেদের অধিকার নিয়ে চলবেন, কারণ এই দেশটা আপনাদেরও।’ সরকার প্রধান হিসেবে সকলের সমঅধিকার নিশ্চিত করা তার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল সকল ধর্মের মানুষ এদেশে সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। এ জন্যই জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলে রক্ত দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা এনেছিল।
তিনি প্রতিটি ধর্মের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, পুরোহিত প্রশিক্ষণ, সারা দেশে মন্দির-উপাসণালয় সংস্কারে ২শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ, হিন্দু নারীদের পিতার সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক করা এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন পাশে তার সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে ১১লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এদেশে আশ্রয় প্রদানে তার সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মানুষের যাতে অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে, দু’বেলা দুমুঠো পেট ভরে খেতে পারে, রোগে চিকিৎসা ও উন্নত জীবন পায় তা নিশ্চিত করার জন্যই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করলে তিনি জোর করেই দেশে ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, ছোট ছোট শিশুদের মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে চলে এসেছিলাম। তাদের হোস্টেলে রেখেছি। বোনের কাছে রেখেছি। কারণ লক্ষ্য নির্দিষ্ট ছিল-এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে এখনও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্যই শ্রীকৃষ্ণ এ ধরায় এসেছিলেন। সকল ধর্মের মূলকথাও একই- মানুষের কল্যাণ করা।
একটি দেশের উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে বর্তমানে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তা থেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। মানবধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম উল্লেখ করে তিনি দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, আগামী ২রা সেপ্টেম্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন বা জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপিত হবে।