Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দের সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতি অভিযোগ

॥এম.দেলোয়ার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানাযায়, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ পেতে হলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে বিদ্যালয়ের রুটিন ও ল্যাট্রিন মেরামতের ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ পাওয়া যায় না। এছাড়াও স্লিপ বরাদ্দ ও প্রাক-প্রাথমিক বরাদ্দ হতেও তিনি যথাক্রমে ৩শ ও ৫শ টাকা করে বাধ্যতামূলক ঘুষ আদায় করেন। আর এ ঘুষের টাকা আদায়ে তাকে সহযোগিতা করেন কিছু অসাধু প্রধান শিক্ষক। বিনিময়ে সহকারী শিক্ষা অফিসারের সাথে সখ্যতা থাকায় তারা দিনের পর দিন নিজের স্কুলে উপস্থিত না থেকে সারা দিন ঘুরে বেড়ান।
গোয়ালন্দ উপজেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নিকট থেকে জানাযায়, গোয়ালন্দ উপজেলায় মোট ৫১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর রুটিন মেরামত ও ল্যাট্রিন মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে সরকার। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৫১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে চর দৌলতদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাবিল মন্ডল পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাউলী কেউটিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, যদু ফকির পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহাজদ্দিন মাতব্বর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কোরবান আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৯টি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় রুটিন মেরামত ও ল্যাট্রিন মেরামত বাবদ ১লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে।
তারা আরো জানান, গোয়ালন্দ উপজেলা শিক্ষা অফিসের ২টি ক্লাস্টার রয়েছে, একটি ছোট ভাকলা ক্লাস্টার অপরটি হচ্ছে সদর ক্লাস্টার। ছোট ভাকলা ক্লাস্টারের ঘুষের টাকা তোলার দায়িত্বে আছেন পূর্ব তেনাপচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফিরোজুল ইসলাম। আর সদর ক্লাস্টারের ঘুষের টাকা তোলার দায়িত্বে আছেন সাহাজদ্দিন মাতবর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বেলায়েত হোসেন। এছাড়া আরো কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ওই সব বিদ্যালয় থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, শুধু উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলামই নন, বিদায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) কাজী ছানোয়ার হোসেনও ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেরামত ও ল্যাট্রিন মেরামতের টাকা থেকে ঘুষ নিতেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন উজানচর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বাবর আলী।
সাধারণ শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বাবর আলী শিক্ষকদের বদলী বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের মূল হোতা। শিক্ষক বদলী বাণিজ্যে শিক্ষক প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন এই বাবর আলী।
অভিযোগ রয়েছে, স্কুল চলাকালীন সময়ে উজানচর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলী ও সাহাজদ্দিন মাতবর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন নিজের স্কুলে উপস্থিত না থেকে অন্যান্য স্কুলে ঘুরে বেড়ান উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলামের মোটর সাইকেলে।
এ ব্যাপারে চাঁদ খান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাহার হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশের সব উপজেলায় কিছু কিছু দালাল আছে। আমাদের উপজেলায়ও কিছু দালাল রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত স্কুল ফাঁকি দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ অন্যান্য স্কুলে ঘুরে বেড়ান। উপজেলা শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বাবর আলী ও বেলায়েত হোসেন ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত নন বলে দাবী করেন।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।