Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পিআরএলে গেলেন বরেণ্য শিক্ষক রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান

॥সুশীল দাস॥ রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান পিআরএলে(অবসরপূর্ব ছুটি) গেলেন। গতকাল ৬ই আগস্ট ছিল বরেণ্য এই শিক্ষকের শেষ কর্মদিবস।
জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এদিন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী সম্মাননা জানান।
সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান ২০১৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পৌনে ৪বছর এই পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জেলার শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি ২মাস ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭বছর রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক(ইংরেজী), সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি ১৯৮১-৮৪ সালে কাশিয়ানীর আলহাজ্ব এজিউচ্চ বিদ্যালয়ে, ১৯৮৪-৮৫ সালে ফরিদপুর হাই স্কুলে এবং ১৯৮৬ সালে কাশিয়ানীর এম.এ খালেক ডিগ্রী কলেজে ইংরেজীর প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।
সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের জন্ম ১৯৫৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দি গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম সৈয়দ হাবিবুর রহমান এবং মাতা আছিরন নেছা। হিরণ্যকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি, কাশিয়ানী এম.এ খালেক ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি, ১৯৭৯ সালে খুলনার সরকারী বি.এল কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে রাজশাহী টিটি কলেজ থেকে বিএড কোর্স সম্পন্ন করে একই বছর থেকে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগদান করেন।
সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান ২০০৩ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক নির্বাচিত হন। বিএসবি ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০১০ সালে তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় সম্মননা প্রাপ্ত হন এবং ২০১৭ সালে সরকারী সফরে ফিলিপাইন যাওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
তিনি অনেক বরেণ্য মানুষের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে উদীচীর সাবেক সভাপতি যতিন সরকার, কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মেদ, বিশিষ্ট উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার, মানবাধিকার নেত্রী ও তত্বাবধাক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডঃ সুলতানা কামাল অন্যতম।
বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী একাডেমীর সভাপতি ও মুক্তি পাঠচক্রের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমী, রাজবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী ও টাউন হল কমিটির আজীবন সদস্য। তার মধ্যে তিনি টাউন হল কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটিরও সদস্য। তিনি শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উপস্থাপক হিসেবেও তার বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। ১যুগ তিনি জেলা প্রশাসনের জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠানে সফলভাবে উপস্থাপনা করেন।
তিনি লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ২টি ইংরেজী গ্রামার বই লিখেছেন, যা সমাদৃত হয়েছে। সামাজিক বনায়ন, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন সময় বিতর্ক ও আবৃত্তি কর্মশালার আয়োজন করে প্রশংসিত হয়েছেন। সর্বোপরি তিনি একজন ভালো সংগঠক। কর্মের মাধ্যমে তিনি চিরদিন রাজবাড়ীবাসীর কাছে বরণীয় হয়ে থাকবেন।
অবসরের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, শিশু, প্রকৃতি আর বই এই তিনটি জিনিস আমার অতিপ্রিয়। অবসরকালীন সময়টা শিশুদের সাথেই কাটাতে চাই। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকতে চাই। সংগঠক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিক্ষা, বৃক্ষরোপণ ও সৃজনশীল লেখালেখি করে যেতে চাই।