Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

নতুন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে রাজবাড়ীর বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে —- জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা গতকাল ৮ই জুলাই সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজীব মিনা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব ও জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি আহমেদ নিজাম মন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ছাদেকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত ৩৩ কেভির নতুন সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। আজ পরীক্ষামূলকভাবে এই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হবে বলে ওজোপাডিকো সুত্রে জানা গেছে। আগামী ৩দিন এই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মাধ্যমে কোন ত্রুটি আছে কিনা সেগুলো যাচাই করা হবে। যদি কোন ত্রুটি না থাকে তবে ৩দিন পর থেকে এই নতুন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। যাতে করে জেলার বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও বজ্রপাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বিঘিœত হতে পারে। জেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমাদেরকে গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো রয়েছে। দু’একটি অনাকাঙ্খিত খুন ও চুরির ঘটনা ছাড়া অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলাকে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক পাচারের নতুন রুট হিসেবে দৌলতদিয়া ঘাট ও অন্যান্য জায়গাকে ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মাদক নিয়ন্ত্রণের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাসহ সকলকে সজাগ দৃষ্টি রেখে মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে রাজবাড়ী জেলাকে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক পাচারের নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, গত ঈদুল ফিতরের সময় দৌলতদিয়া ঘাটে সকলের সহযোগিতায় বড় ধরণের কোন সমস্যা ছাড়াই যাত্রীদের নির্বিঘেœ পারাপার করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিআইব্লিউটিসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। এ জন্য কমিটির পক্ষ থেকে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে পাবনা জেলার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি আনা নেওয়ার জন্য মোংলা থেকে অন্যান্য নদী পথের সাথে রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীকে প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করা হবে। যার কারণে বড় বড় নৌযান চলাচলের জন্য নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ড্রেজিংয়ের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য এই ড্রেজিং প্রকল্পের ফলে রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে বিষয়টি চিন্তা করে ড্রেজিংয়ের খননকৃত মাটি রাজবাড়ী জেলার অংশে নদীর পাড়ে ফেলার কথা থাকলেও তা পাবনা জেলার অংশে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বারংবার বলা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমনকি এ বিষয়ে তাদেরকে পাবনা জেলার সাথে রাজবাড়ী জেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নিয়ে সমন্বয় সভা করার জন্য বারংবার বলা হলেও তারা তা করছে না। যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রকল্প, সেহেতু এ জন্য রাজবাড়ী জেলার সংসদ সদস্যগণসহ সকল জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সম্মিলিতভাবে ভবিষ্যতের নদী ভাঙ্গনের কথা চিন্তা করে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলার কয়েকজন সাংবাদিকের নামে কিছুদিন পূর্বে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে যে মানববন্ধন করা হয় তাতে রাজবাড়ী জেলার কর্মরত কোন সাংবাদিক ছিল না। এ বিষয়ে আমি এতটুকু বুঝি, সাংবাদিকদের কোন যৌক্তির দাবী আদায়ের জন্য রাজবাড়ী জেলার সাংবাদিকরাই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে অযৌক্তিক নিজের স্বার্থ হাসিলের কিছু বিষয় এবং কারো সম্মানহানী করার উদ্দেশ্যেই রাজবাড়ী জেলার কর্মরত কোন সাংবাদিককে সম্পৃক্ত না করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করানো হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্য মতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি পরপর ২বার তারই শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানী করেছে বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে না। আমি আশা করবো, জেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা তার বক্তব্যে বলেন, জেলার মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী অনেকে পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হলে জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আমি ও আমার কর্মকর্তাদেরকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মাদক সংক্রান্ত কোন বিষয়ে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। সুতরাং ভবিষ্যতে কেউ মাদক ব্যবসায়ী বা সেবনের সাথে জড়িত কাউকে ছাড়ার জন্য অনুরোধ করবেন না বলে আমি আশা করি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, বিভিন্ন সুত্রের তথ্য মতে রাজবাড়ী জেলায় যারা বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। তাদের ধরতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। যদি জেলাবাসীসহ সকলে এই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান না করে তবে রাজবাড়ী জেলা থেকে চিরতরে মাদক নির্মূল করা অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং মাদক নির্মূলে সকলকে অবশ্যই পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় মধ্য রাত পর্যন্ত তরুণ-তরুণীদের আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্খিত। রাত ৮টার পর প্রয়োজন ছাড়া কোন তরুণ-তরুণীকে বাইরে আড্ডা দিতে দেখা গেলে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে তাদেরকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের সন্তান রাতে বাইরে কোথায় যাচ্ছে, কি করছে সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
এছাড়াও পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি মাদক, চুরি, মার্কেটে পাহারাদার না থাকা, দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে অপরাধ প্রবণতা দমনসহ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
এছাড়াও সভায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইন নতুন করে স্থাপন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিথ্যা অভিযোগ এনে কতিপয় সাংবাদিকের মানববন্ধন এবং এই মানববন্ধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কাস্টমস বিভাগ কর্তৃক অভিযান পরিচালনা না করা, মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইকের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, সুইমিং পুল সংস্কার, পৌর মেয়রদের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকা, ধাওয়াপাড়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়সহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।