Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

শহীদওহাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান তোরাপ মন্ডল কর্তৃক আত্মসাতকৃত বিশেষ ভিজিএফ চাল জব্দ করলেন ইউএনও

॥দেবাশীষ বিশ্বাস/ইউসুফ মিয়া॥ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের দেওয়া বিশেষ ভিজিএফের চাল আত্মসাত করে অবশেষে ফেঁসে গেলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোরাপ আলী মন্ডল।
জনতার হাতে আটকের পর ১৩৭ বস্তা (৩.৭০০ টন) চাল আটকের খবর পেয়ে গতকাল ১৪ই জুন বিকালে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান সেখানে উপস্থিত হয়ে তা জব্দের পর সেগুলো শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য নূর মোহাম্মদ ভূঁইয়া এবং ১নং ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম হোসেন ফরিদের জিম্মায় দিয়েছেন। জব্দকৃত চালের মূল্য দেড়লক্ষাধিক টাকা বলে জানাগেছে।
এ ঘটনায় সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস.এম মনোয়ার মাহমুদ বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তোরাপ আলী মন্ডলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
জানাগেছে, ঈদ উপলক্ষে শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য ১৪.৪৪৪ টন (১৪ হাজার ৪৪৪ কেজি) ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। জনপ্রতি ১০ কেজি করে এই চাল বিতরণ করার কথা। গতকাল ১৪ই জুন সকাল থেকে সেই চাল বিতরণ করা শুরু হয়। ১০ কেজির স্থলে দেয়া হচ্ছিল ৭ কেজি করে। তারপরও বেলা ১টার দিকে কার্ডধারী ৩/৪শত জনের চাল দেয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলে বিতরণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। একপর্যায়ে শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মোমিন বাজার(চিটার বাজার) সংলগ্ন মনু মিয়ার হলুদের মিলে বিপুল পরিমাণ চাল পাচারের ঘটনা জানাজানি হয়।
জনতা কর্তৃক সেই চাল আটকের পর খবর পেয়ে শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য নূর মোহাম্মদ ভূঁইয়াসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৩৭ বস্তা (৩.৭০০ টন) চাল জব্দ করে নূর মোহাম্মদ ভুঁইয়া ও ১নং ওয়ার্ডের গোলাম হোসেন ফরিদের জিম্মায় দেন। খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত বস্তা থেকে চালুগুলো বের করে সেই বস্তা দিয়েই ঢেকে রাখা ছিল। চাল জব্দ করার সময় ইউপি চেয়ারম্যান তোরাপ আলী মন্ডল ঘটনাস্থলে গেলে উপস্থিত জনতার রোষানলে পড়ে এবং এক পর্যায়ে গ্রেফতার এড়াতে তিনি সটকে পড়েন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান বলেন, এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তোরাপ আলী মন্ডলের বিরুদ্ধে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস.এম মনোয়ার মাহমুদ বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
জব্দকৃত চাউলের ব্যাপারে শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তোরাপ আলী মন্ডল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রথম পর্যায়ে ১হাজার ৩৪৪জনের মধ্যে চাল বিতরণ করার থাকলেও পরবর্তীতে ৯৮জনকে যুক্ত করে ১হাজার ৪৪২জন গরীব-দুঃখীর মাঝে বিতরণ করা হয়। তার দাবী, তাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মহল দুঃস্থদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে ভ্যানযোগে মনো মিয়ার হলুদের মিলে রেখে প্রশাসনকে খবর দেয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, জব্দকৃত চালের ব্যাপারে দ্রুত মামলা দায়ের করা হবে। মামলায় দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, তোরাপ আলী মন্ডল একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় তার উত্থান। কুটির হাটের ইজারা নেয়ার পাশাপাশি হাটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ এবং ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করে অর্থ ঋণের মামলায় জড়িয়ে তিনি সমালোচিত হন। বিগত ইউপি নির্বাচনের পূর্বে মোটা অংকের টাকা-পয়সা খরচ করাসহ বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগের যোগদান করে ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়।