অতিরিক্ত ফেরী ও লঞ্চ চালু এবং নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ
॥আশিকুর রহমান॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার বলা হয়ে থাকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটকে। এই রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ হাজার ছোট-বড় যানবাহন পারাপার হয়। ঈদকে ঘিরে এই সংখ্যা বেড়ে হয় কয়েকগুণ। ফলে ঘাট ও এর আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে যানজট, চুড়ান্ত দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের।
আসন্ন ঈদুল ফিতরে এ ধরনের দুর্ভোগ কমিয়ে যাত্রা নির্বিঘœ করতে অতিরিক্ত ফেরী ও লঞ্চ চালু এবং নিরাপত্তা জোরদারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন(বিআইডাব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১৪ থেকে ১৫টি ফেরী চলাচল করে। কিন্তু ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাহবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে এ নৌরুটে ১৯টি ফেরী চালু রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রো-রো (বড়) ফেরী ৯টি, কে-টাইপ(মাঝারি) ৪টি ও ইউটিলিটি ফেরী রয়েছে ৬টি। প্রতিটি বড় ফেরী একসঙ্গে ১১ থেকে ১২টি যাত্রীবাহী বাস নৌরুট পারাপার করতে পারে। তবে প্রাভেটকার বা মাইক্রোবাসের মতো ছোট আকারের ৪০ থেকে ৪৫টি পর্যন্ত গাড়ি একসঙ্গে বড় একটি ফেরীতে পারাপার হতে পারে। এছাড়া কে-টাইপ ফেরীরতে একসঙ্গে আটটি বাস অথবা ২৫/৩০টি ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি একসঙ্গে পারাপার করতে পারে। আর ইউটিলিটি ফেরীগুলোর একেকটি একসঙ্গে ছয়টি বাস অথবা ২০/২২টি ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি পারাপার করতে পারে।
তিনি বলেন, নদীতে বর্তমানে নাব্যতার সংকট নেই। এ কারণে ফেরীগুলো পূর্ণ লোড নিয়ে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। যাত্রাপথে কোনো ফেরী বিকল হলে তৎক্ষণাৎ তা মেরামতের জন্য পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ঈদের আগের ও পরের তিন দিন জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য সব ধরনের ট্রাক ও লড়ি ফেরি দিয়ে পারাপার বন্ধ রাখা হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারের ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীদের কোনো ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে মনে করছেন বিআইডাব্লিউটিসি’র এই কর্মকর্তা।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের সুপারভাইজার মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৩৪টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হবে। লঞ্চে পারপারে নারী, শিশু ও প্রতবন্ধী যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোনো ধরনের অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ঈদকে ঘিরে লঞ্চ ও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া আদায় ঠেকাতে দৌলতদিয়া ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া, মানুষ যেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে নির্বিঘেœ বাড়ি যেতে পারে এবং ঈদ শেষে নির্বিঘেœ কর্মস্থলে ফিরতে পারে সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, ঈদকে ঘিরে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি ও পকেটমারসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড নির্মূল করতে দৌলতদিয়া ঘাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ ঘাট, ফেরী ঘাট ও বাস টার্মিনালসহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারী করবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলার ও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সভায় সমিতির নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন ঈদ উপলক্ষে কোনো যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়া হয়।