॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী সদর থানা ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আয়োজনে গতকাল ২৬শে মে সকাল ১০টায় মাদক নির্মূল, জঙ্গী দমন, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা সদর থানা চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা।
রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ তারিক কামালের সভাপতিত্বে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সদর থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুর রহিম মোল্লা, বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা বদিউজ্জামান বাবু, খানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মোঃ আতাহার হোসেন তকদীর, মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মান্নান মুসল্লী প্রমুখ।
এছাড়াও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যদের মধ্যে জালাল উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া বাবলু, আব্দুস সালাম, আব্দুল হানিফ, আনিসুর রহমান, ফরিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন শেখ, মনির হোসেন ও জয়েন উদ্দিন প্রমুখ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ আছাদুজ্জামান, রাজবাড়ী সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ জিয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, সদর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনয়নের কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, বর্তমানে মাদক সারা দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর এই মাদকের কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়বে-তারা আজ মাদকের ভয়াল গ্রাসে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সন্তানদেরকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের এই মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য মতে যে সকল ইউনিয়নের মাদকের প্রকোপ বেশী সেসব জায়গায় সাধারণ জনগণকে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ইনফরমেনশন দিয়ে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে জেলা পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য জড়িত এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে তাদেরকে সহায়তা করছে। এ সংক্রান্তে আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন। কোন পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লে কিছুদিনের মধ্যেই আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে বের হয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের কিছুই করার থাকে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ বর্তমানে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। মাদকের বিষয়ে কাইকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে আরও বলেন, শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। বাল্য বিবাহ হলে একজন কন্যা শিশুর কি কি স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে প্রথমে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। আর এই সচেতন করার জন্য যারা বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে অবগত তাদেরকে আশেপাশের যারা এ বিষয়ে অবগত নয় তাদেরকে অবগত করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকে এই বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরও ভালো পাত্র পেলেই সন্তানের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বাল্য বিবাহ দেয়া অভিভাবকদের প্রথমে সচেতন করতে হবে। তারা যদি না শোনে তবে প্রতিরোধের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে মতবিনিময় সভায় উঠে আসা বিভিন্ন বিষয়, যেমন- নদীতে, চরাঞ্চলে ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় সর্বহারাদের তৎপরতার বিরুদ্ধে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা, হাইওয়েতে ডাকাতি ও ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ইভটিজিং প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সর্বোপরি জেলার আইন-শৃঙ্খলা ভালো রাখার স্বার্থে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যগণসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে জেলা পুলিশ ভবিষ্যতে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে পুলিশ সুপার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।