॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বামনীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পাশের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে দপ্তরী-কাম-প্রহরী পদে চাকুরী নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ গত ২৯শে মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সদস্য সচিব উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন।
আবুল কালাম আজাদের লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক গত ১৮/০৯/২০১৭ইং তারিখে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বামনীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী-কাম-প্রহরী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির ১১নং ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়, ‘কোন তথ্য গোপন বা ভুল তথ্য প্রদান করে চাকুরীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নিয়োগ আদেশ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ পরবর্তীতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এক অফিস আদেশে ১২/১০/২০১৭ইং তারিখে অন্যান্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে বামনীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী-কাম-প্রহরী পদে আলামিন কাজী, পিতা-শমসের কাজী, মাতা-আলেয়া বেগমকে নিয়োগ দেয়া হয়।
উক্ত আলামিন কাজী তার আবেদনপত্রের সাথে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ২০০৪ সালে ৮ম শ্রেণী পাশের যে সার্টিফিকেট দাখিল করে তাতে তার জন্ম তারিখ ০৪/০৫/১৯৯০ ইং উল্লেখ করা হয়। অথচ আলামিন কাজী ইং ২০০৩ সালে বামনীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৫ম শ্রেণী পাশ করে এবং সেই বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিস্ট্রারে তার জন্ম তারিখ ০৯/০২/১৯৯৯ইং এন্ট্রি করা আছে। এতেই প্রমাণিত হয়, আলামিন কাজী তার আবেদনপত্রের সাথে ৮ম শ্রেণী পাশের যে সার্টিফিকেট দাখিল করেছে তা সম্পূর্ণভাবে ভুয়া। কারণ সে ২০০৩ সালে ৫ম শ্রেণী পাশ করলে পরের বছরই অর্থাৎ ২০০৪ সালে ৮ম শ্রেণী পাশ করলো কিভাবে! আসলে সে আদৌ ৮ম শ্রেণী পাশ করে নাই এবং যে সার্টিফিকেট দাখিল করেছে তা সম্পূর্ণরূপে ভুয়া এবং জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করা। এ বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় ২য় হওয়া আনিছুর রহমান গত ০২/১১/২০১৭ইং তারিখে নিয়োগ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও তিনি কোন তদন্ত বা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। এমতাবস্থায় লিগ্যাল নোটিশে নিয়োগ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উল্লেখিত বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতের আশ্রয় নেয়ার কথা বলা হয়। রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের এডঃ মোঃ মাহবুব উল করিমকে দিয়ে এই লিগ্যাল নোটিশটি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে বামনীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুধু আনিছুর রহমানই নয়-আরেক প্রার্থী ও বিদ্যালয়ের জমিদাতা মোঃ আলমগীর খাঁও এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবেও আমিও নিয়োগ কমিটিতে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব কোন কিছুই আমলে নেননি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় জনমতের চাপে তিনি লিগ্যাল নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এতেও কোন কাজ না হলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, এ বিষয়ে চাকুরী প্রার্থী মোঃ আলমগীর খাঁ বিভিন্ন দপ্তরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনেও লিখিত অভিযোগ/আবেদন করেন। কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (বিঃ অনুঃ ও তদন্ত-১) মীর মোঃ জয়নুল আবেদীন শিবলীর স্বাক্ষরিত ২২/০২/২০১৮ইং তারিখের পৃথক ২টি পত্রে সেই অভিযোগ/আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে।