॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ীর স্বপ্ন হিজড়া উন্নয়ন সংঘের আয়োজনে ও বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহযোগিতায় গতকাল ২৫শে এপ্রিল সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের পাথেয়’ শীর্ষক পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান বক্তব্য রাখেন।
স্বপ্ন হিজড়া উন্নয়ন সংঘের সভাপতি তানিশা ইয়াসমিন চৈতীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার উম্মে ফারহানা, এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু, সমপদের নির্বাহী পরিচালক হেলাল উদ্দিন সরদার, নৃত্যশিল্পী আব্দুস সাত্তার কালু প্রমুখ।
পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার উম্মে ফারহানা। এ সময় সদর থানার ওসি মোঃ তারিক কামাল, স্বপ্ন হিজড়া উন্নয়ন সংঘ ও হিজড়া সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যগণ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, অন্যান্য সাধারণ জনগণের মতো হিজড়া সম্প্রদায়ও আমাদের সমাজের একটি অংশ। অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো হিজড়াদের উন্নয়নেও আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। পুলিশ সুপারের বক্তব্য অনুযায়ী সৃষ্টির উপরে কিছু নাই। হিজড়া সম্প্রদায়কে সৃষ্টিকর্তার এই সৃষ্টির বিষয়টি মেনে নিয়ে নিজেদের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন লঞ্চ ঘাট, ফেরী ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন যানবাহনে হিজড়াদের জোরপূর্বক অর্থ আদায় ও তাদের চেয়ে বেশী বয়সী মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার ও হয়রানী করতে দেখা যায়। বিষয়টি সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। রাজবাড়ী জেলায় কোন এনজিও বা সরকারী প্রতিষ্ঠান হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করছে না। ৬ বছর আগে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারসহ কিছু সংগঠন হিজড়াদের নিয়ে কাজ করলেও প্রকৃত অর্থে তাদের উন্নয়নে কিছুই করেনি। সামনে সময় নষ্ট না করে আমাদের সকলকে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। রাজবাড়ী জেলায় হিজড়াদের দাবী অনুসারে তাদের জন্য একটি পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করে গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে। তারা যাতে শিক্ষা গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেরা উপার্জন করতে পারে সে জন্য জেলা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সরঞ্জাম সরবরাহ ও যারা লেখাপড়া করছে তাদের শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও জেলায় পঞ্চাশোর্ধ যে সকল হিজড়া রয়েছে তাদেরকে সরকারী বিভিন্ন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলায় যে সকল ছোট-বড় এনজিও ও ব্যক্তিবর্গ প্রকৃত অর্থেই হিজড়াদের জন্য কিছু করতে চায় আমি আশা করবো তারা সকলে হিজড়াদের প্রশিক্ষণসহ সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। এভাবে আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে তাদের উন্নয়নে যদি কাজ করতে পারি তবে সাধারণ মানুষের মতো
হিজড়ারাও দেশের সার্বিক উন্নয়নে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে হিজড়া সম্প্রদায়ের কোন সদস্য যদি যোগ্যতা অনুযায়ী কোন সরকারী চাকুরীতে আবেদন করে তবে জেলা প্রশাসক হিসেবে এ জেলায় থাকাকালে তিনি তাদেরকে চাকরী প্রাপ্তিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং জোরপূর্বক অর্থ আদায় ও বিভিন্ন হয়রানীমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে অন্য সাধারণ মানুষের মতো সম্মানের সাথে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উপরে মানুষের কোন হাত নাই। তিনি আমাদের যেভাবে সৃষ্টি করেছেন হিজড়াদেরও একইভাবে সৃষ্টি করেছেন। তারাও আমাদের মতো মানুষ এবং আমাদের সমাজেরই অংশ। আমাদের সকলের উচিত তাদের জন্য নিজেদের সামর্থ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী কিছু করা। আমার দেখা মতে হিজড়ারা একটু বড় হলেই সাধারণ মানুষ তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করে। যার ফলে একসময় তারা সমাজ থেকে আলাদা হয়ে নিজেদেরকে মতো চলতে থাকে। বর্তমানে দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনের ফলে সকলেই এখন মনে করে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী সকলেই এ দেশের নাগরিক। সকলেরই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম সুযোগের অধিকার রয়েছেন। সেই দিক বিবেচনায় হিজড়ারাও সমাজের অংশ এবং তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আজকে এই সভায় জেলা প্রশাসক তাদের থাকার ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের আশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে যে উদারতার পরিচয় দিলেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আজকে এখান থেকে যে যাত্রা শুরু হলো সেটি সবসময় অব্যাহত থাকবে এবং এই উন্নয়নের সাথে জেলা পুলিশ সবসময় পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।
স্বপ্ন হিজড়া উন্নয়ন সংঘের আয়োজনে রাজবাড়ীতে পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত
