॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৫ই এপ্রিল সকাল ১০টায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাকিব খান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম, ওজপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফায়েরল আহমেদ ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের আর মাত্র দুই মাস বাকী আছে। তার উপরে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদকালের এই বছরই শেষ বছর। সুতরাং জেলার সকল বিভাগকে এই অর্থ বছরসহ এই সরকারের মেয়াদকালের শেষ বছরে জেলার যে সমস্থ উন্নয়ন কাজ এখনও বাকী আছে বা চলমান রয়েছে সেগুলো যাতে সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয় সেই লক্ষ্যে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে জেলা সড়ক বিভাগ ও বন বিভাগের অনেক পুরাতন গাছ ছিল। মহাসড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে গাছগুলোকে সড়ক বিভাগের ও বন বিভাগের মালিকানা নির্ধারণ করে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য সরকারী নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অভিযোগসহ বিভিন্নভাবে জানা যায়, সড়ক বিভাগের অধিকাংশ বড় বড় দামী গাছগুলো সড়ক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর এই হরিলুটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবকে জানানো হয়। তিনি সরকারী সম্পদের হরিলুটের এই বিষয়টি কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে বিষয়টি আমাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
সচিবের নির্দেশের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এর নেতৃত্বে জেলার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৯সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সরেজমিন তদন্ত ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রতীয়মান হয়েছে যে, জেলা সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগের কিছু অসৎ ও লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকার গাছগুলোর অধিকাংশই কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে গেছে। শুধু সেটাই নয়, কিছু সংখ্যক গাছ যেগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোও গাছের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য নির্ধারণ করে এইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় বিক্রি কার হয়েছে। এক কথায় জেলা সড়ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তায় সরকারী কোটি কোটি টাকার সম্পদ লোপাট করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারী সম্পদ লোপাটের এই বিষয়টি কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানিয়েছি। যাতে কোন অবস্থাতেই এই লোপাটের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড় না পায়।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলা পরিষদ কর্তৃক গোদার বাজার পদ্মাপাড়ের বিনোদন কেন্দ্রসহ উপজেলা চেয়ারম্যানদের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের এলাকার মসজিদসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হলেও সেগুলোর অনেকগুলো এখনও বাকী আছে। আমরা আশা করি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যেভাবে আশার কথা শোনান সেভাবে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত করবেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে এবং এডিবির সহায়তায় কয়েকটি রাস্তার প্রশস্তকরণের কাজ করা হবে।
জেলা পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প একনেকে পাশের অপেক্ষায় আছে। রাজবাড়ীর কালুখালী ও বালিকান্দি উপজেলায় চন্দনা নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়নের বোর্ডের যে সব জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে বা নদীর চলার পথকে বাঁধাগ্রস্ত করছে সে সকল জায়গার লীজ বাতিল করে উচ্ছেদ করতে হবে কলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও সভায় রাজবাড়ী কৃতি সন্তান ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম বজলুল করিমের সচিব পদে পদোন্নতি, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনের রাস্তা মেরামত, ড্রেন সংষ্কারসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কোয়ার্টার সংষ্কার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাসভবন নির্মাণ, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণের কাজ বাস্তবায়নে মন্থরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করাসহ বিটিসিএলের ইন্টারনেটের ধীরগতি, জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি, দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষায় যে বালুর বস্তা দ্বারা ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা হয়েছে সেগুলো যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য করণীয়, আগামী ২৩শে এপ্রিল সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ বিষয়ে অবহিতকরণ সভা এবং ২৩ ও ২৫শে এপ্রিল পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন, পাসপোর্ট অফিসের হয়রানী বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
সভা শেষে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ কর্তৃক একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম(এটুআই) এর কিশোর বাতায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত “আমার জেলা আমার অহংকার” প্রতিযোগিতায় ৩টি গ্রুপের মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর গুগল গ্রুপের, ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণীর উইকি গ্রুপের এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী ইউটিউব গ্রুপের অংশগ্রহণকারী রাজবাড়ী জেলার ১২জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।