Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দ হাসপাতালে ঢুকে দুর্বৃত্তের তান্ডব॥৩জন যুবককে কুপিয়ে জখম

॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে গত ১০ই এপ্রিল প্রবেশ করে তিন যুবককে এলোপাথারী কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ।
জখম অবস্থায় আব্দুল আজিজ(২৫) ও নাইমুর রহমান(২৫) নামের দুইজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। শাহরিয়ার আদনান নুর-ইসলাম(২৫) নামের আরেকজনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই ৩জনের বাড়ি গোয়ালন্দ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শাহরিয়ার আদনান নুর-ইসলাম অভিযোগ করেন, গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য কমিটি গঠন নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যেও ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে পূর্বের বিরোধ ছিল। গত মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার জামতলা এলাকায় আমি(নুর ইসলাম) আব্দুল আজিজ, নাইমুর রহমানসহ বসে গল্প করছিলাম। পূর্বের বিরোধের জের ধরে এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক এর ছোট ভাই আরিফুর রহমান ওরফে মিশুক ও সহকর্মী লিটনের সাথে নাইমের ঝগড়া লাগলে নাইমকে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে দেয়। নাইমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন আরিফুর রহমান, তরিকুল ইসলাম রিমন, আজিমুল ইসলাম, আকাশসহ ৬/৭জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাসপাতালের প্রবেশ করে। দুর্ঘটনা আঁচ করতে পেরে ষ্টাফরা দরজা দ্রুত বন্ধ করে। দুর্বৃত্তরা দরজা ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করে রামদা দিয়ে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। ভয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়ার্ড বয় মনিরুজ্জামান শৌচাগারে ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবুল কালাম আজাদ কক্ষের এক পাশে লুকিয়ে পড়েন। তার আগ মুহুর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালুক নাসির হোসেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার প্রবেশ করলে তিনি ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় নাইম, নুর ইসলাম ও আব্দুল আজিজের শরীরে বেশ কয়েকটি কোপ লাগে। দায়ের কোপে চেয়ার কেটে কয়েক টুকরো হয়ে যায় ও অন্যান্য আসবাব ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লোকজন জড়ো হলে তারা দ্রুত বের হয়ে যায়।
হাসপাতালে উপস্থিত জেলা অনুমোদিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তুহিন দেওয়ান অভিযোগ করেন, নাইমের সাথে লিটনের মধ্যে আগ থেকে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে প্রথমে পৌরসভার জামতলা এলাকায় পরে দ্বিতীয় দফা হাসপাতালে জরুরী বিভাগের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে তারা নাইম, আব্দুল জব্বার ও নুর-ইসলামকে কুপিয়ে জখম করে। ধস্তাধস্তিকালে হামলকারীদের দুটি রামদা রেখে দেওয়া হয়।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, নাইমকে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণ পর ৪/৫জন যুবক হাতে রামদা নিয়ে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। এ সময় নাইমসহ আব্দুল আজিজ ও নুর ইসলাম জখমপ্রাপ্ত হন। নাইম ও আব্দুল আজিজকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের কেন্দ্র ঘোষিত নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে খোকন নিজে এবং ছোট ভাই আরিফুর রহমান মিশুক জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বন্ধু লিটনের সাথে ছাত্রদলের নাইম ও নুর-ইসলামের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। গত মঙ্গলবার দুপুরে লিটনকে একা পেয়ে ওরা মারধর করে। খবর পেয়ে লিটনের কিছু লোকজন এগিয়ে গেলে তাদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে হাসপাতালে ঢুকে কারা মারামারি করেছে আমার জানানেই। এমনকি ছাত্রলীগের কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ সহিদুল ইসলাম হাসপাতাল ঘুরে এসে জানান, খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পুলিশ পৌছলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় জরুরী বিভাগ থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোন পক্ষ থানায় অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।