Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া ঘাটে বড় সিন্ডিকেট জড়িত॥এতে রয়েছে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা –রাজবাড়ীর নবাগত পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা

॥শিহাবুর রহমান/আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গতকাল ১০ই মার্চ সকাল বেলা ১১টায় নবাগত পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা’র সাথে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবসহ জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত শোনেন এবং তার বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন বিষয়ে যে মতামত প্রকাশ করেছেন তা জেলা পুলিশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাজের ধরন অনেকটা একই রকম সে জন্য পুলিশ ও সাংবাদিকদের সকল মতবিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য ও জেলার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা।
তিনি বলেন, আমি রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পর্যালোচনার মাধ্যমে জেলার প্রধান সমস্যা হিসেবে মাদক ও দৌলতদিয়া ঘাটকে চিহ্নিত করেছি। জেলা থেকে মাদকসহ নির্মূলসহ আইন-শৃঙ্খলা যাতে আরো ভালো করা যায় সেই লক্ষ্যে আগামীতে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদক সংশ্লিষ্ট কেউই কোন প্রকার ছাড় পাবে না। আমি আশা করব সাংবাদিকরা মাদক নির্মূলে তথ্য দিয়ে জেলা পুলিশকে সহযোগিতা করবে।
তিনি আরো বলেন দৌলতদিয়া ঘাট রাজবাড়ী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হওয়ায় আমি সেই ঘাটে যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনের বিষয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। মূলতঃ দৌলতদিয়া ঘাট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করে। তাই ঘাটের সকল সমস্যা সমাধান করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। দৌলতদিয়া ঘাটে অনেক বড় সিন্ডিকেট কাজ করে। যার সাথে অনেক প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে-যা আপনাদের জানা রয়েছে। পুলিশ যদি সেখানে পোনা মাছ খায়, তাহলে বোয়াল মাছ খাচ্ছে বড় বড় মানুষ। বোয়াল মাছ যারা খাচ্ছে তাদের ধরাটাও একটু কঠিন। শক্ত জালে তাদের ধরতে হবে। এজন্য আমার একটু সময় লাগবে। আমাকে একটু সময় দিন। তাহলে বোয়াল ও পোনা মাছ খাওয়া বন্ধ হবে।
তিনি বলেন, আমি বিপ্লব ঘটাতে পারবো না। তবে সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবো। আমি আশা করি জেলাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।
পুলিশ সুপার বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশ বিভিন্ন দিকে অর্থনৈতিকভাবে সফল হলেও সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো দিকের চেয়ে খারাপ দিক ব্যবহারের কারণে প্রযুক্তিগত অবক্ষয় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রযুক্তিগত অবক্ষয়ের কারণে আজকে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করে পতিতাপল্লীতে নিয়ে বিক্রি করছে একশ্রেণীর অসাধু দালাল। আমি রাজবাড়ীতে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নির্যাতিতা ওই সকল নারীদের উদ্ধারসহ তাদেরকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করার বিষয়গুলো নিয়ে জেলা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক সংগঠন ও মহিলা আইনজীবী সংস্থাসহ অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করব। সম্ভব হলে নির্যাতিতা নারীদের জন্য রাজবাড়ী থানায় একটি নারী সাপোর্ট সেন্টার খোলা হবে, যাতে নির্যাতিতা নারীরা তাদের অভিযোগ সেখানে লিপিবদ্ধ করতে পারেন। কোন অবস্থাতেই নারী-শিশু নির্যাতনকারীদেরকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
এছাড়াও মতবিনিময় সভায় ট্রাফিক সমস্যা, ইভটিজিং, যানবাহনে অবৈধ এলইডি লাইটের ব্যবহার, হিজড়াদের পুনর্বাসন ও জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচিত বিষয়গুলো পর্যাক্রমে অতি দ্রুত সমাধান করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি সকলকে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গঠনে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মোঃ জহুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, রাজবাড়ী টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল কুদ্দুস বাবু, বাংলা ভিশন টেলিভিশন ও দৈনিক সংবাদের জেলা প্রতিনিধি এম.দেলোয়ার হোসেন, বিটিভি’র জেলা প্রতিনিধি মোঃ সানাউল্লাহ্ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, সদর থানার ওসি মোঃ তারিক কামাল এবং ডিআইও-১ মোঃ জহিরুল ইসলামসহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, জেলার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।