Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

অবশেষে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হলে বাবুপুর কছিমউদ্দিন বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ অবশেষে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাবুপুর কছিম উদ্দিন বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।
এ স্কুলের মোট ৮৬জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২দফায় ৮০জনকে ৯৫হাজার ৪৬টাকা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট ৬জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় তাদের অর্থ ফেরত দেয়া সম্ভব হয়নি। তাদেরকে এসে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খবর দেয়া হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বিকেবি ছাত্র কল্যাণ সংস্থা’র আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটলো।
ফিরে দেখা ঃ চলতি বছর বাবুপুর কছিমউদ্দিন বিদ্যাপীঠের প্রতিটি এসএসসি পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষার ফি’র চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ‘অফিসের সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে কোন রশিদ ছাড়াই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ের গত ৩০শে নভেম্বর-২০১৭ তারিখে সর্বপ্রথম দৈনিক মাতৃকণ্ঠে “কর্তৃপক্ষ নীরব॥সদর উপজেলার বাবুপুর কছিমুদ্দিন বিদ্যাপীঠে এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীতে আদায়কৃত অতিরিক্ত ফেরত দেয়ার দাবীতে আন্দোলনে নামে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বিকেবি ছাত্র কল্যাণ সংস্থা’। গত ৪ঠা ডিসেম্বর সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের পর জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
ওই দিনই জেলা প্রশাসক ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন। জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান ৭ই ডিসেম্বর সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি ‘অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সকল শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তাদেরকে অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ার নির্দেশনাসহ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এহেন কাজ ভবিষ্যতে না করার জন্য সতর্ক করা যেতে পারে’ বলে উল্লেখ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক ২৫শে জানুয়ারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা খাতুনকে ‘কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না’ মর্মে ৭দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষিকা জবাব দেওয়ার পর ১৯শে ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসক তাকে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। অবশেষে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক স্কুল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলো।
এরমধ্যে ২৬শে ফেব্রুয়ারী ১২জন পরীক্ষার্থীকে ১২ হাজার ২৪০ টাকা এবং গতকাল ২৭শে ফেব্রুয়ারী ৮০ জন পরীক্ষার্থীকে ৮২ হাজার ৮০৬ টাকাসহ মোট ৯৫ হাজার ৪৬টাকা ফিরিয়ে দেয়া হলো।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বিকেবি ছাত্র কল্যাণ সংস্থা’র সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন আলী রেজা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের ঘটনাটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অর্থ ফেরত না দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা ও কালক্ষেপনসহ নানা অপচেষ্টা করলেও আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তিনি আরো বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোর এ ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের দপ্তর থাকলেও তাদের নাকের ডগার উপর এবার বিভিন্ন স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটলেও তারা নীরব ছিল! পরে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে শুধুমাত্র বাবুপুর কছিম উদ্দিন বিদ্যাপীঠে টাকা ফেরত দেওয়া হলো।
কিনি বলেন, অর্থ ফিরিয়ে দেয়া হলেও আমরা এখন দেখার অপেক্ষায় আছি, দোষী স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষা অধিদপ্তর কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে কোন স্কুল এ ধরনের কাজ করার সাহস পাবে না। তাই আমরা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।