Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে চলছে সরকারী গাছ হরিলুট॥সড়ক বিভাগের দায়সারা মামলা দায়ের

॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বাগমারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস হতে আফড়া পর্যন্ত টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকা মূল্যের শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে বৃক্ষ দস্যুরা। প্রায় একমাস যাবত সময় ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে এ গাছ কাটার মহোৎসব চললেও রহস্যজনকভাবে সড়ক বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাকের গা থেকে বৃক্ষ দস্যুরা কোটি টাকা মূল্যের কয়েক শত গাছ কেটে নিলেও সড়ক বিভাগের লোকজন গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী দুপুরে মাত্র ৩টি গাছের গুড়ি উদ্ধার করে।
হাস্যকর এ অভিযোগে ওই দিন(গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী) রাজবাড়ী থানায় মামলা করেছেন সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশিদ। তিনি ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০০টি বড় মাপের গাছ কর্তনের বিষয় উল্লেখ করেছেন। তবে এ মামলাটি সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানো মামলা বলে জনশ্রুতি রয়েছে। রাজবাড়ী থানার মামলা নং-২৩, ধারাঃ ৩৭৯ পেনাল কোর্ড। মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়, আহলাদীপুর-রাজবাড়ী-পাংশা-কুমারখালী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন অংশের গাছ বিক্রির জন্য টেন্ডার দেয়া হলেও রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের অধিক্ষেত্র সীমানার মধ্যে চরবাগমারা হতে আফড়া বাজার পর্যন্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টার দিকে রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশিদ আহলাদীপুর নাম স্থানে সড়কের মেরামত কাজের তদারকি করার সময় খবর পান কতিপয় লোকজন টেন্ডার অসমাপ্ত অংশের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। খবর পেয়ে তিনি বিষয়টি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে অবগত করেন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তিনিসহ অন্যান্যরা উক্ত সড়কের ১৭ ও ১৯তম অংশে উপস্থিত হয়ে গাছ কেটে নেয়ার চিহৃ দেখতে পান। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৩টি গাছের গুলি উদ্ধার করেন তারা।
জানাযায়, প্রায় দুই মাস ধরে আহলাদীপুর থেকে আফড়া পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার নাম করে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশের গাছ কাটার উৎসব শুরু হয়। প্রথমে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কাটা হচ্ছে বলে শোনা গেলেও পরবর্তীতে তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। কোথায় বা কবে টেন্ডার হয়েছে তাও অনেকেরই বোধগম্য নয়। আবার টেন্ডার হলেও লক্ষাধিক টাকা মূল্যের গাছও পানির দামে বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। কারো কিছু বোঝার আগেই রাস্তার দুই পাশে থাকা কোটি কোটি টাকা মূল্যের গাছ কেটে নেয়া হয়।
জনশ্রুতি আছে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে একটি চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করে নিয়ে যায়।
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে রাস্তার সরকারী গাছ কর্তনের মাধ্যমে লোপাটের বিষয়ে কালুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম উত্থাপন করেন। এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী সভায় সরকারী গাছ লোপাটের ঘটনায় কোন মামলা না করায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দায়সারা ভাবে মাত্র ২০লক্ষ টাকার গাছ চুরির অভিযোগে উক্ত মামলা দায়ের করা হয়।