॥আবুল হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার বদিউজ্জামান বেপারীপাড়া সড়ক দিয়ে গতকাল ৩০শে জানুয়ারী চলাচলরত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সামনে দাঁড়িয়ে একটি হাতি তার বিশাল লম্বা শুড় উচিঁয়ে টাকা তুলতে দেখা যায়। যানবাহনের গতিরোধ করে এভাবে টাকা তোলায় স্থানীয় অনেকেই অবাক হয়ে দৃশ্যটি দেখেন। এ সময় কেউ কেউ মন্তব্য করতে থাকেন ‘লাল বাহাদুরে’র এমন চাঁদাবাজি রোধ করার কি কেউ নেই।
সকাল নয়টার দিকে সড়ক দিয়ে পায়ে বাঁধা পিতলের ঘুগরি ও গলায় ঘন্টার আওয়াজ করতে করতে বীরদর্পে সামনের দিকে যাচ্ছিল একটি হাতি। হাতির পিঠে বসে আসেন একজন তরুন। হাতিটির সামনে দিয়ে যে কোন ধরনের যানবাহন আসলেই তাকে গতিরোধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। রিক্সা, মোটর সাইকেল, ব্যাটারী চালিত রিক্সার যাত্রী, ট্রাক থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন এমনকি পথচারীদেরও গতিরোধ করে টাকা তুলছে। কেউ টাকা না দিলে বিশাল লম্বা শুড় উঁচিয়ে হুঙ্কার দিয়ে শব্দ করছে। ভয়ে আর কেউ তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলনা। বাধ্য হয়ে পকেটে যার যেমন আছে তাই দিয়ে সন্তুষ্ট করে চলে যাচ্ছে।
মোটর সাইকেলে করে অফিসের কাজে যাচ্ছিলেন আসলাম নামের এক যুবক। তিনি জানান, ভাই উপায় নাই। যেভাবে সামনে এসে দাঁড়ায় বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। তবে কেউ কেউ খুশি হয়েই ১০/২০ টাকা দিচ্ছে। নসিমনে করে বাজারে যাওয়ার সময় হাতির পাল্লায় পড়ে পকেট থেকে খোয়া যায় ২০টাকা। মনে এক ধরনের কষ্ট নিয়ে বলেন, টাকা কামাই করা যে কত কঠিন যে করে সে বুঝে। অথচ এভাবে গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে সারারাস্তা ভরে এরা টাকা তুলছে। বাধার দেওয়ার কেউ কি নায়?
হাতির পিটে থাকা তরুন মাহুত নিজেকে সৈকত শেখ পরিচয় দিয়ে জানায়, ফরিদপুরের দিকে যাচ্ছি। এত সাত সকালে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, আমরা রাতভর নানা ধরনের খেলা দেখায়। খেলা শেষে সাত সকালেই ‘লাল বাহাদুরে’র (হাতির নাম) খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। প্রতিদিন অনেক খাবার লাগে ও টাকা খরচ হয়। তা জোগাড় করতেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছি। কিন্তু এভাবে গাড়ি ও পথচারীদের থামিয়ে টাকা তোলা এক ধরনের চাঁদাবাজি কি না জানতে চাইলে ওই তরুন জানায়, মানুষ হাতি দেখলে এমনিতে খুশি হয়ে টাকা দেয়। কারো কাছ থেকে জোর করে নেওয়ার প্রয়োজন নাই। প্রতিদিন অন্তত ৫/৬হাজার টাকা খরচ হয়। তবে দিন শেষে কোন দিন ১০ হাজার টাকা উঠে। আবার কোন কোন দিন এর থেকে বেশি বা কম টাকাও উঠে। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে দেখে সে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করে।
“লাল বাহাদুরের চাঁদাবাজি!”
