Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুইটি করে কারিগরি ট্রেড চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে — শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের আয়োজনে গতকাল ১৮ই জানুয়ারী বেলা ১২টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকবৃন্দ ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী(মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ) আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম. বজলুল করিম চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এডঃ এম.এ খালেক, বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল জলিল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, রাজবাড়ী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নূর উদ্দিন, ভান্ডারিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল এরশাদ মোঃ সিরাজুম্মুনির, কোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও বেথুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাজাহান কাজী প্রমুখ।
সভায় সদর উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নুরমহল আশরাফী। এ সময় রাজবাড়ী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মদ খান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর আক্তার বিউটি, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মোঃ জহুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, সদর উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অন্যান্য সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এমপি বলেন, আজকের সভার সম্মানিত অতিথি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম. বজলুল করিম চৌধুরী রাজবাড়ীর কৃতি সন্তান। আমি তাকে অনেক আগে থেকেই চিনি। তিনি একজন সৎ ও বিচক্ষণ সরকারী কর্মকর্তা। রাজবাড়ীতে আসার জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এই অনুষ্ঠানটি অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমার প্রতিমন্ত্রী হওয়ার কারণে তারিখ পিছানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করায় আমি রাজবাড়ীবাসী ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। রাজবাড়ী জেলা ছোট হলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে আমাদের এই জেলার ঐতহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের কারণে এই জেলার মানুষ শিক্ষা অনুরাগী। সেই কারণে আমি এমপি হওয়ার পর থেকে এই জেলার শিক্ষার আরো প্রসারের জন্য সব সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ দিয়েছি ও শিক্ষা বিস্তারে বিশেষভাবে কাজ করেছি। যার কারণে আজকে রাজবাড়ী জেলায় আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। এখন শিক্ষকদের অনেক বেশী দায়িত্ব নিয়ে এই জেলার মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে কাজ করতে হবে। আমার দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাকে কারিগরি শিক্ষার উপর বেশী গুরুত্ব দিতে বলেছেন। যাতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২টি করে কারিগরি ট্রেড চালু হয় সে জন্য আমি কাজ করব। দেশটা যেহেতু আমাদের সকলের সে জন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
রাজবাড়ীর উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধে স্থায়ী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, বিদ্যুতের গ্রীড স্টেশন, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণসহ বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও আগামী ফেব্রুয়ারীতে সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা করার কাজ ও জুন মাসে একটি পূর্ণাঙ্গ পলিটেকনিক্যাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়াও রাজবাড়ীর মাদ্রাসা ও স্কুলগুলোর কাজসহ যে সমস্ত কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেটা এই নির্বাচনের আগেই আমি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। তার জন্য আমি রাজবাড়ীবাসীর কাছে দাবী করবো যে সরকারের আমলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ রাজবাড়ী জেলার যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার ধারা যাতে ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় সেই লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে আবার আমরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবো। যাতে দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। তিনি রাজবাড়ীবাসীকে তার কর্মে সফলকাম হওয়ার জন্য দোয়া কামনা করেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম. বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান দেখে আমি সত্যিই খুব অভিভূত হয়েছি। রাজবাড়ীর সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিরা আমাকে যেভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছে তার জন্য আমি সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি দূরের কেউ নই, এই রাজবাড়ীরই সন্তান। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের জেলায় আগে আসলে সকলে একটু অন্যভাবে নেবে যার কারণে আমি একটু পরে নিজের জেলায় এসেছি। আমি আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছি সিলিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর বাবার চাকুরীর কারণে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করতে হয়েছে। তাই পুরনো অনেকে আমাকে চিনলেও নতুনরা সেভাবে চেনে না। রাজবাড়ী জেলা একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। আমার সহকর্মী যারা এই জেলায় ছিলেন তারা সকলেই এই জেলার প্রশংসা করেছেন। খেলাধুলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে একসময় রাজবাড়ী বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে অগ্রগামী ছিল। আজকে সেই ধারাকে আরো বেগবান করতে আমাদের মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে সকলকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নারী শিক্ষার উপর বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে এই জেলায় দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় বাল্য বিবাহ ও লেখাপড়া থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেশী। আমরা যদি নারী শিক্ষার উপর বেশী গুরুত্ব দিই তবে বাল্য বিবাহ, শিক্ষার মান উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবো। এ ছাড়াও আমাদের মাদক, জঙ্গীবাদ নির্মূলেও সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের নিজেদের নিয়ে চিন্তা না করে সকলকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যখনই আমরা শুধু নিজেদের পরিবর্তে সকলকে নিয়ে চিন্তা করবো তখনই আমাদের নিজেদের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হবে। যার ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তিনি দেশের উন্নয়নে সকলকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীসহ অন্যান্য বক্তাগণ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্মকান্ডসহ মানসম্মত শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও সম্মানিত অতিথিকে সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোসহ শুভেচ্ছা স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভার পূর্বে প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম. বজলুল করিম চৌধুরী রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর উদ্বোধন করেন ও চত্বরের বাগানে দুইটি গাছের চারা রোপন করেন।