Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী-ফরিদপুর মহাসড়কের বেহাল দশা॥ভোগান্তি চরমে

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বেশীর ভাগ জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দের। কোন কোন অংশে পিচ ঢালা রাজপথ তৈরী হয়েছে গ্রামের কাঁদামাখা রাস্তায়। কয়েক কিলোমিটার অংশে পিচের অস্তিত্বই নেই। প্রায় বছর খানেক সময় ধরেই মহাসড়ক ২টির এমন অবস্থা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই ২টি রুট দিয়ে চলাচলকারী খুলনা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রীরা।
বিশেষ করে রাজবাড়ী শহরের মুরগীর ফার্ম থেকে গোয়ালন্দ মোড় পর্যন্ত ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকাগামী যাত্রীদের। সড়কের বেহাল দশায় যানবাহন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকেরা। প্রচন্ড ঝাঁকিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব রুটের যাত্রীরা। এ ছাড়াও অনবরত ধুলাবালি উড়তে থাকায় সড়ক ২টি পরিণত হয়েছে ভূতুরে সড়কে।
দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাগুলোর এমন বেহাল দশায় কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জেলার সড়ক বিভাগ। বালু ফেলে গর্ত ভরার চেষ্টা করলেও বৃষ্টিতে সেটি পরিণত হচ্ছে কাঁচা মাটির রাস্তায়। কাঁদা আর ধুলাবালিতে কষ্ট করেই এ সব পথে চলাচল করছে সাধারণ যাত্রীরা। টানা বর্ষণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বসন্তপুর স্টেশন বাজার পর্যন্ত ১৬কিলোমিটার এলাকা। পাশাপাশি গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কের কল্যাণপুর ও আহলাদীপুর এলাকার মহাসড়ক এখন খানাখন্দের সড়কে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন দেখাগেছে, বসন্তপুর স্টেশন বাজার থেকে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট পর্যন্ত সড়ক একেবারে নাজুক। অত্যন্ত ব্যস্ত এই মহাসড়কের ১৬কিলোমিটার এলাকায় শত শত খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বসন্তপুর রেলক্রসিং এলাকার অবস্থা একেবারে ভয়াবহ। বড় বড় খানাখন্দের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও গাড়ী চালকদের। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
ফরিদপুরগামী একটি মোটর সাইকেলের চালক ডাঃ আমিন বলেন, রাস্তার জায়গায় জায়গায় গর্ত আর গর্তের মধ্যে পানি জমে আছে। এতে করে মোটর সাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হয়। একেতো রাস্তা খারাপ তার উপরে প্রচন্ড ধুলাবালিতে চোখেই দেখা যায় না। কর্তৃপক্ষর প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি ঠিক করার জন্য।
রাজবাড়ী থেকে ঢাকাগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাঝে মধ্যেই এ সব রাস্তায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানী ঘটছে সাধারণ যাত্রীদের। অনেকে আহত হয়ে দিনের পর দিন অসুস্থ্য থাকছেন। দ্রুত এসব রাস্তা মেরামত করার দরকার।
ফরিদপুর থেকে পাংশাগামী ট্রাক চালক শামীম বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী যাবার যে সব রাস্তা আছে সে সব রাস্তার মধ্যে ভাঙ্গা গর্ত। ঝাঁকিতে গাড়ীর রিং ভেঙ্গে পড়েেছ। গাড়ীর ক্ষতি হচ্ছে। এমন রাস্তায় গাড়ী চালোনোর কোন পরিবেশ নাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন যথাসাধ্য চেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাগুলো মেরামত করে দেন।
মোটর সাইকেলের চালক আশিকুর রহমান বলেন, বসন্তপুর রেলক্রসিং এলাকার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাজবাড়ী বা ফরিদপুর যেতে এই এলাকা সবাইকেই পার হতে হয়। মাঝে মধ্যেই রাস্তার বেহাল দশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। যা জনজীবনের জন্য দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি করছে। আমরা চালকরা খুবই কষ্ট ভোগ করছি।
ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী ট্রাক চালক মিজান জানান, রাস্তায় ভোগান্তির শেষ নেই। দৌলতদিয়া থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাম যার পুরো রাস্তাটাই ভাঙ্গা।
বসন্তপুর এলাকার স্থানীয় পথচারী আবুল কালাম বলেন, বসন্তপুর রেলগেট এলাকার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তা দিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়।
ইজি বাইক চালক মিন্টু সেখ বলেন, বসন্তপুর এলাকা ও কল্যাণপুর এলাকার রাস্তা দিয়ে যাত্রী নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। ঝাঁকিতে যাত্রীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আশিকুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের আওতাধীন গোয়ালন্দ মোড় থেকে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ পর্যন্ত আমাদের মোট রাস্তা ৪৮কিলোমিটার এবং গোয়ালন্দ মোড় থেকে শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৮কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতের মাধ্যমে রাস্তা-ঘাট সচল রাখা হচ্ছে। ঠিকাদার কাজ করছে। সুতরাং খুব বেশী দিন রাস্তা খারাপ থাকবে না। ৩/৪ মাসের মধ্যেই রাস্তাটা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে যাবে। গাড়ী চলাচলে কোন সমস্যা থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত যেটা ন্যাশনাল হাইওয়ে এটা আমাদের ১৯কিলোমিটার রাস্তা নিয়মিত মেরামতের মাধ্যমে ঠিক রাখা হচ্ছে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানেও ২টা টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফরিদপুর টু দৌলতদিয়া সড়ক ঠিক হবে। পরবর্তী কাজ চলমান থাকবে।
মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহন চলাচলে দুরবস্থা এবং যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ রুটের যাত্রী ও গাড়ী চালকেরা।